নতুন জেলা তৈরির পরে কেটে গিয়েছে প্রায় দেড় বছর। কিন্তু এখনও ন্যাশনাল চাইল্ড লেবার প্রজেক্টের (এনসিএলপি) কাজ শুরুই হয়নি পশ্চিম বর্ধমানে। ফলে, জেলায় শিশু শ্রমিক নিয়োগের প্রবণতা বন্ধ করা বা তাদের কল্যাণে কাজ করা অনেকটাই প্রশ্নচিহ্নের মুখে। অথচ, এই জেলায় বিভিন্ন দোকান, খাদান, ইটভাটায় শিশু শ্রমিক দেখা যায়।
জেলা শ্রম দফতর জানায়, তাদের তত্ত্বাবধানে ও কেন্দ্রের সহযোগিতায় চলে এই প্রকল্পটি। প্রকল্পের কাজ শুরুর আগে জেলা স্তরে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি তৈরি করতে হয়। সেই কমিটিকে সোসাইটি আইনে নথিভুক্ত করার পরেই কেন্দ্রের আর্থিক সহায়তা মেলে। শ্রম দফতরের জেলা আধিকারিকেরা জানান, কমিটি গঠন হয়ে গিয়েছে। এখন সেটি সোসাইটি আইনে নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নবান্নে পাঠানো হয়েছে।
জেলা শ্রম দফতরের তরফে শিশু শ্রমিকের বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী লেবার কমিশনার বিদেশ মণ্ডল জানান, জেলার সর্বত্র ঘুরে-ঘুরে পরিদর্শকেরা শিশু শ্রমিকের খোঁজ করবেন। কেন ও কোন পরিস্থিতিতে শিশুদের কাজ করানো হচ্ছে, তা জানার চেষ্টা হবে। প্রয়োজনে ওই শিশুদের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলা হবে। শিশুদের কল্যাণে একগুচ্ছ নির্দেশিকাও রয়েছে প্রকল্পে।
যদিও এই জেলায় শিশু শ্রমিকের সংখ্যা কিছু কম নয় বলে শ্রম দফতর সূত্রে জানা যায়। বিদেশবাবু জানান, শিল্পাঞ্চলের ইটভাটা, পাথর খাদান, পাথর ভাঙার কল, জাতীয় সড়ক-সহ বিভিন্ন বড় রাস্তার পাশের ধাবা, বেকারি ও খাবারের দোকানে শিশু শ্রমিক দেখা যায়। শিক্ষা দফতরের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, অনেক সময়ে রুজির টানে স্কুলছুট শিশুদের স্কুলছুট হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। এ ছাড়া কিছু ক্ষেত্রে পরিবারের লোকজনও শিশুদের কাজে লাগাচ্ছেন।
শ্রম দফতর জানায়, ভিন্ রাজ্য থেকে আসা অনেক শ্রমিক জেলার নানা ইটভাটায় কাজ করেন। সেখানে তাঁদের সঙ্গে থাকা শিশুদের দিয়েও কাজ করানো হচ্ছে, এমন ঘটনাও নজরে এসেছে। এ ছাড়া, শিল্পাঞ্চলের এক দল দালাল ভিন্ রাজ্য থেকে নাবালক-নাবালিকাদের নিয়ে এসে পাথর ভাঙার কল, ধাবা ও বেকারিগুলিতে নিয়োগ করে। শ্রম দফতর জানিয়েছে, ওই দালালদের চিহ্নিত করে আইনি পদক্ষেপ করা হবে ও শিশুদের পুনর্বাসন দেওয়া হবে। জোর দেওয়া হবে সচেতনতা প্রচারেও।
কেন এখনও প্রকল্পের কাজ শুরু হল না জেলায়? জেলার ডেপুটি লেবার কমিশনার শ্যামল রায়চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘নতুন জেলা তৈরি হওয়ায় এ বিষয়ে কিছুটা দেরি হয়েছে। তবে এ বার দ্রুত গতিতে কাজ হবে।’’ এনসিএলপি কমিটির অন্যতম কর্ণধার তথা অতিরিক্ত জেলাশাসক অরিন্দম রায় জানান, রাজ্য এ বিষয়ে কাজ করার নির্দেশ পাঠিয়েছে। জেলা পর্যায়ে বেশ কিছু বৈঠকও হয়েছে।