আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদ। কাটোয়ায় শনিবার। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রায় ১০ মাস আগে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ থেকে দেহ পাচারের চেষ্টার অভিযোগের ফাইল চেয়ে পাঠিয়েছেন অধ্যক্ষ মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার সেই ঘটনা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা শুরু করল স্বাস্থ্য ভবনও।
আর জি কর কাণ্ডের পরে মর্গ থেকে দেহ পাচারে একটি ‘চক্র’ গড়ে উঠেছিল বলে মনে করছে সিবিআই। সেই চক্রের সঙ্গে ‘বর্ধমান লবি’র যোগ রয়েছে বলে চিকিৎসকদের একাধিক সংগঠনের দাবি। তাদের দাবি, এর সঙ্গে ‘বর্ধমান লবি’র মাথা অভীক দে-র গোষ্ঠীর যুক্ত থাকাও অসম্ভব নয়। বর্ধমান মেডিক্যাল ছাড়াও, দক্ষিণবঙ্গের রামপুরহাট মেডিক্যাল, আরামবাগ মেডিক্যাল-সহ আরও কয়েকটি কলেজে ‘বর্ধমান লবি’র প্রভাব ছিল। এমনকি, ওই সব মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির বৈঠকেও অভীক হাজির থাকতেন বলে নানা সূত্রের দাবি। তিনি ওই সব বৈঠক ‘নিয়ন্ত্রণ’ করতেন, এমন অভিযোগও পৌঁছেছে স্বাস্থ্য ভবনে। কীসের স্বার্থে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভীককে সেখানে উপস্থিত থাকার অনুমতি দিত, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর।
ইতিমধ্যে ‘বর্ধমান লবি’র দুই মাথা অভীক ও বিরূপাক্ষ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেছে স্বাস্থ্য ভবন। দু’জনের জন্য দু’টি পৃথক কমিটিও গঠন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য ভবনের দাবি, ওই দু’জনের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ উঠছে, তা খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেবে কমিটি। আর্থিক তছরুপের অভিযোগ থাকলে, তার রিপোর্টও দিতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য ভবনের কাছে এসএসকেএমের সার্জারি বিভাগ থেকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে, চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি অভীক দে স্নাতকোত্তরের (এমএস) জন্য ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু তিনি ৮ অগস্ট থেকে কাউকে কিছু না জানিয়ে বিভাগে আসছেন না। শুধু তাই নয়, স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পিজিটি (শল্য)-র রেজিস্ট্রেশন সম্পূর্ণ করেননি, আধারের সঙ্গে বায়োমেট্রিক (এইবিএস) সংযুক্তিকরণ করেননি। ফলে, কলেজে তাঁর উপস্থিতি গ্রাহ্য হয়নি। পিজিটি ছাত্র হিসেবেও ডিনের অফিস থেকে পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেননি।
কলেজ সূত্রের দাবি, বেওয়ারিশ মৃতদেহের বিষয়ে নির্দিষ্ট সময় অন্তর পুরসভাকে জানানো হয়। তারা নিয়ম মেনে সেই দেহ নিয়ে গিয়ে সৎকার করে। গত বছর নভেম্বরে বেওয়ারিশ দেহ পাচারের চেষ্টা করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ ওঠে। পুলিশ আটকে দেয়। চিকিৎসক সংগঠনের দাবি, এই ঘটনার তিন বছর আগে দার্জিলিংয়ের মাটিগাড়ার এক জনকে ‘ডোম’ পদে নিয়োগ করা হয়। তার মাধ্যমে ও কলেজের এক ‘প্রাক্তনী’র যোগসাজসে দেহ পাচার হচ্ছিল বলে ধারণা কর্তৃপক্ষের।
স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তা বলেন, “দেহ পাচারের ঘটনায় অভীক দে ও তাঁর সহযোগীদের কোনও হাত রয়েছে কি না, খুঁজে দেখার কথা বলা হয়েছে।”