লাগাতার বিদ্যুৎ চুরির জের, রাজস্ব ক্ষতি জেলায় 

বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার আসানসোল শাখা সূত্রে জানা যায়, এখানের একাধিক এলাকায় লাগামছাড়া বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগ বহু দিনের। সংস্থার আধিকারিকদের একাংশের দাবি, চুরি রুখতে মাঝেসাঝে অভিযান চলে। কিন্তু অভিযানের রেশ থিতিয়ে গেলেই ফের শুরু হয় বিদ্যুৎ চুরি।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

আসানসোল শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৭:৩০
Share:

—প্রতীকী ছবি।

জেলায় লাগামছাড়া বিদ্যুৎ চুরি। আর তার জেরে চলতি আর্থিক বর্ষে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। বিষয়টি সামনে আসার পরেই নড়েচড়ে বসেছে পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসন। রাজস্ব বাড়াতে ও চুরি রুখতে সম্প্রতি জেলাশাসক শশাঙ্ক শেঠির উপস্থিতিতে বৈঠকও হয়েছে।

Advertisement

বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার আসানসোল শাখা সূত্রে জানা যায়, এখানের একাধিক এলাকায় লাগামছাড়া বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগ বহু দিনের। সংস্থার আধিকারিকদের একাংশের দাবি, চুরি রুখতে মাঝেসাঝে অভিযান চলে। কিন্তু অভিযানের রেশ থিতিয়ে গেলেই ফের শুরু হয় বিদ্যুৎ চুরি।

কিন্তু কী ভাবে হচ্ছে এই চুরি? বণ্টন সংস্থার আধিকারিকেরা জানান, বিভিন্ন এলাকায় পর্যবেক্ষক পাঠিয়ে দেখা গিয়েছে, হুকিং করে বিদ্যুৎ চুরির ঘটনা তো রয়েইছে। সঙ্গে, মিটারে কারসাজি, তা-ও চলছে। ফলে যত টাকা বিল হওয়া উচিত, বাস্তবে তার চেয়ে অনেক কম বিল উঠছে। আবার এ-ও দেখা গিয়েছে, কোনও গ্রাহকের মিটার খারাপ থাকলে সেটি সময়মতো বণ্টন সংস্থার তরফে বদলে দেওয়া হচ্ছে না। পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে মাসে মাসে গড়পড়তা বিল পাঠানো হচ্ছে। যা তাঁর প্রকৃত বিদ্যুৎ বিলের তুলনায় অনেক কম। এর বিনিময়ে তাঁর কাছ থেকে মাসিক কিছু টাকা দালাল মারফত পকেটে পুরছেন সংস্থারই এক শ্রেণির অসাধু কর্মী। সম্প্রতি আসানসোল বাজারে অভিযান চালানোর সময়ে এই বেনিয়ম নজরে এসেছে বলে বণ্টন সংস্থার কর্তাদের একাংশ জানিয়েছেন। তাঁদের দাবি, প্রাথমিক তদন্তে নেমে মনে করা হচ্ছে, মিটার কারচুপির সব ক্ষেত্রেই জড়িয়ে আছেন এক শ্রেণির অসাধু কর্মী।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ চুরির জেরে জেলায় সরকারের প্রায় কোটি টাকার উপরে রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর।

তবে সম্প্রতি বিদ্যুৎ চুরি রুখতে কিছু পদক্ষেপের কথা জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও জেলা প্রশাসন। সংস্থার কয়েক জন আধিকারিক জানান, ‘দোষী’ কর্মীদের খুঁজে বার করা হচ্ছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (বিদ্যুৎ) প্রশান্ত মণ্ডল বলেন, ‘‘সম্প্রতি কুলটির বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ১৭০টি অবৈধ সংযোগ কাটা হয়েছে। বেশ কয়েক জনকে বৈধ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। প্রায় ৩০ হাজার টাকা অনাদায়ী বিদ্যুৎ বিল আদায় করা হয়েছে। জেলা জুড়ে আমরা বিশেষ শিবির বানিয়ে এই প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখব।’’

জেলাশাসক শশাঙ্ক শেঠি বলেন, ‘‘চুরি রুখতে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ ও ধারাবাহিক সচেতনতা প্রচার চালানো হবে।’’ জানা গিয়েছে, আসানসোল শাখার অধীনে কুলটি, বরাকর, আসানসোলের রেলপাড়, আসানসোল বাজার, দোমহানি অঞ্চলে চুরির প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। জেলাশাসক জানান, চুরি রুখতে বিশেষ কিছু পদক্ষেপ করা হচ্ছে। কিছু এলাকা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। মাটির তলা দিয়ে বিদ্যুতের কেব্‌ল নিয়ে যাওয়া, মাথার উপরে যাওয়া কেব্‌লগুলিকে ঢাকা দেওয়া, মিটারে কারচুপি রুখতে গ্রাহকদের ‘প্রিপেড মিটার’ দেওয়া-সহ নানা পদক্ষেপ করা হবে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এর জন্যে প্রায় চারশো কোটি টাকা খরচ করা হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement