পূর্বস্থলীর চকরাহাতপুরে আলু লাগানো। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল।
গত বছরের চেয়ে হিমঘরে আলু কম মজুত হয়েছিল। তার পরেও নভেম্বরের শেষে প্রায় ১০ লক্ষ টন আলু রাজ্যের হিমঘরগুলিতে পড়ে থাকবে বলে আশঙ্কা করছে ‘পশ্চিমবঙ্গ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি’। একই ভাড়ায় আরও এক মাস, অর্থাৎ ডিসেম্বর পর্যন্ত হিমঘরে আলু রাখার আবেদন জানিয়ে রাজ্যের কৃষি বিপণন দফতরকে চিঠি দিয়েছে সংগঠন। দফতরের মন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেন, “আমরা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি।”
ওই সংগঠন সূত্রে জানা যায়, গত বছর রাজ্যে প্রায় ৪৫০টি হিমঘরে আলু মজুত হয়েছিল ৬৫ লক্ষ টন। সরকার নির্ধারিত সময়সীমার (নভেম্বর) শেষে প্রায় সাত লক্ষ টন আলু পড়েছিল। সংগঠনের চেয়ারম্যান, হুগলির বাসিন্দা লালু মুখোপাধ্যায় বলেন, “এ বার ৬৩ লক্ষ টনের মতো আলু মজুত হয়েছিল। এখন ১২ লক্ষ টন আলু পড়ে রয়েছে। নভেম্বরের শেষে ৯-১০ লক্ষ টন আলু হিমঘরে মজুত থাকবে।” সংগঠনের সভাপতি বিভাস দে ও সম্পাদক বরেন মণ্ডল মন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে একই ভাড়ায় ৩০ নভেম্বরের পরিবর্তে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত হিমঘরে আলু রাখার দাবি জানিয়েছেন।
আলু পড়ে থাকবে বলে মনে করছে রাজ্যের হিমঘর মালিক সংগঠনও। তাদের আশা, এ বছর জলদি আলু বাজারে আসতে তুলনামূলক বেশি সময় লাগছে। সে কারণে হিমঘরের আলু বিক্রি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ওই সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক, পূর্ব মেদিনীপুরের তরুণ ঘোষ অবশ্য আলু ব্যবসায়ীদের দাবি মানতে নারাজ। তাঁর কথায়, “একই ভাড়ায় হিমঘরে আলু রাখার মেয়াদ এক মাস বাড়ানো হলে খরচ কে দেবে?”
চাষি, আলু ব্যবসায়ী ও হিমঘর মালিকদের একাংশের দাবি, রাজ্যে সারা বছরে ৫৫-৬০ লক্ষ টন আলুর প্রয়োজন। সেখানে উৎপাদন হয় গড়ে ১২০ লক্ষ টন। বাকি আলু ভিন্ রাজ্যে রফতানি করা হয়। কিন্তু বর্তমানে সেই সব রাজ্যে রফতানি কমে গিয়েছে। উল্টে, উত্তরপ্রদেশ, হিমাচল, পঞ্জাবের আলুতে ছেয়ে যাচ্ছে জেলার বাজার। আলু ব্যবসায়ী সংগঠনের রাজ্যের নেতা জগবন্ধু মণ্ডল বলেন, “আলুর ক্রেতা কমতে শুরু করেছে। দাম থমকে গিয়েছে।”
ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা যায়, প্রতি বস্তা আলু (৫০ কেজি) বিক্রি হচ্ছে গড়ে ৭৫০ টাকায়। সংরক্ষণকারীদের দাবি, হিমঘরের ভাড়া, ঝাড়াই-বাছাই করে আলু বিক্রিতে এখন প্রতি বস্তায় গড়ে ৭৫ টাকা লোকসান হচ্ছে। হিমঘর মালিক সংগঠনের এক নেতার দাবি, “উত্তরবঙ্গের হিলি সীমান্ত দিয়ে প্রায় এক লক্ষ টন আলু বাংলাদেশে যাচ্ছে। এর ফলে উত্তরবঙ্গের সংরক্ষণকারীরা কিছুটা সামাল দিতে পেরেছেন।”