এমনই হাল হয়েছে জেলার বহু ধানজমির। নিজস্ব চিত্র
লাগাতার নিম্নচাপে জেলা জুড়েই ক্ষতির মুখে চাষিরা। তার মধ্যেই ১৬ মার্চ ফের একটি নিম্নচাপের জেরে ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানাচ্ছে কৃষি দফতর। তবে আতঙ্কিত না হয়ে, চাষিদের দ্রুত ফসল কেটে ঘরে তোলার পরামর্শ দিয়েছে তারা। যদিও চাষিদের দাবি, এমনিই জমিতে জল জমে থাকায় ধান কাটার যন্ত্র নামানো যাচ্ছে না। তার উপরে রাতারাতি ফসল কাটার জন্য শ্রমিকই বা কোথায় মিলবে!
জেলায় এক লক্ষ ৭২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে এ বার। চাষিরা জানান, ধানে ‘থোড়’ আসার সময় থেকেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুরু হয়। পরপর ঝড়, শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি হয় ধানে। ক্ষতি হয়েছে তিল, পাট, আনাজেও। কৃষি দফতরের হিসাবে, জেলায় কোথাও ২০, কোথাও ৩০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আগামী দুর্যোগ নিয়ে চাষিদের সচেতন করছে তারা। ‘সোশ্যাল মিডিয়া’তেও প্রচার চলছে।
কৃষি-কর্তাদের দাবি, অযথা আতঙ্কিত না হয়ে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে ক্ষতি এড়াতে মাঠে পড়ে থাকা বোরো ধান, মুগ, বাদামের মতো ফসল দ্রুত তুলে নিতে হবে। তিলের ক্ষেত্রে বৃষ্টির জল জমে গেলে, দ্রুত জল বার করার ব্যবস্থা করতে হবে। কলা, পেঁপে জাতীয় ফলের গাছ ঝড়ে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সে ক্ষেত্রে আনাজ-মাচা এবং পানের বরোজে শক্ত বাঁধন দেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। দুর্যোগ কেটে গেলে, জমিতে ছত্রাকনাশক ছড়ানোর কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু চাষিদের প্রশ্ন, ‘লকডাউন’-এ শ্রমিক সঙ্কট এবং লাগাতার বৃষ্টির মাঝে এত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব কী ভাবে!
মন্তেশ্বরের চাষি রক্তিম ঘোষের দাবি, ‘‘ধানের জমিতে এখনও জল জমে আছে। ফলে, ধান কাটার যন্ত্র নামানো যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে আবার বৃষ্টি হলে সব নষ্ট হয়ে যাবে।’’ পূর্বস্থলীর আনাজ চাষি সমীর সরকারেরও আশঙ্কা, ‘‘রাতারাতি ফসল কাটা বা মাচা দেওয়া সম্ভব নয়। আর বড় ঝড় হলে, মাচাও ভেঙে পড়বে। কিছুই বাঁচানো যাবে না।’’
মন্তেশ্বর ব্লকের কৃষি আধিকারিক কনক দাসের দাবি, ক্ষতির পরিমাণ যাতে না বাড়ে, সে জন্য চাষিদের আগাম দুর্যোগের বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করা হচ্ছে। তিনি জানান, ধান তোলার কাজে গতি আনার জন্য দফতরের তরফে এলাকার কোথায়, কোন ‘হারভেস্টার’ যন্ত্র বিক্রি হয়েছে তার তালিকা করা হয়েছে। যন্ত্রের মালিকদের নম্বর পৌঁছে দেওয়া হয়েছে চাষিদের কাছে। যাতে তাঁরা ফোন করে ধান কাটার ব্যবস্থা করতে পারেন। জেলার অন্যতম সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘আবহাওয়া দফতরে তথ্য অনুযায়ী, ১৬ মে-র পরে, নিম্নচাপটি দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে সক্রিয় হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ক্ষতি এড়াতে সতর্ক করা হচ্ছে।’’