কাটোয়ায় জলপ্রকল্প। নিজস্ব চিত্র
বকেয়া আড়াই কোটি টাকা জলকর চেয়ে কাটোয়া পুরসভাকে চিঠি দিল পোর্ট ট্রাস্ট। জলকর না মেটালে ভাগীরথী থেকে পুরসভা জল তুলতে পারবে না বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে ওই চিঠিতে। এই খবর জানাজানি হতে পুরসভার অন্দরে শোরগোল প়ড়েছে। কারণ, এত টাকা মেটানো পুরসভার পক্ষে সম্ভব নয়। অথচ কর মেটাতে না পারলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে গঙ্গা থেকে আসা পানীয় জল। সঙ্কটে পড়তে পারেন শহরবাসী।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন পনেরো আগে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন পোর্ট ট্রাস্ট একটি বিজ্ঞপ্তিতে কাটোয়া পুরসভাকে জানায়, ২০১৪ সালের ২০ অগস্ট থেকে ২০১৮-র ৩১ মার্চ পর্যন্ত জলকর বাবদ ২ কোটি ৫০ লক্ষ ৩৪ হাজার ৭৬৪ টাকা মিটিয়ে দিতে হবে পুরসভাকে। তবে কর মেটানোর জন্য কোনও সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি। এই বিজ্ঞপ্তি হাতে পাওয়ার পর থেকেই চিন্তিত পুর-কর্তৃপক্ষ। রাজ্য সরকারের সহযোগিতা ছাড়া যে এত মোটা অঙ্কের টাকা শোধ দিতে পুরসভা অক্ষম, তা জানিয়েছেন পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়।
কাটোয়া শহরের ২০টি ওয়ার্ডে আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল সরবরাহের উদ্দেশ্যে বছর চারেক আগে কেন্দ্রীয় সরকারে আর্থিক সাহায্যে পুরসভা ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২ নম্বর ওয়ার্ডে শশ্মশানঘাটের পাশে পানীয় জল প্রকল্পটি চালু করে। ভাগীরথী থেকে জল তুলে চারটি ওভারহেড ও তিনটি আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যাঙ্কের মাধ্যমে তা শহরের ২০টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের ঘরে ঘরে পৌঁছে যায়। প্রকল্প চালুর আগে ভাগীরথী থেকে জল তোলার জন্য ১০ লক্ষ টাকা আগাম জমা দেয় পুরসভা। তবে তখন করের বিষয়ে পুরসভাকে কিছুই জানানো হয়নি বলে দাবি পুর-কর্তৃপক্ষের। ইতিমধ্যে নাগরিকদের কাছে জলকর নেওয়াও বন্ধ করেছে রাজ্য সরকার।
এই অবস্থায় প্রায় চার বছরের এই বিপুল বকেয়া জলকর ঘাড়ে চাপায় পুরপ্রধান যারপরনাই চিন্তিত। তাঁর কথায়, ‘‘এখন চিন্তা একটাই। যদি জল তোলা বন্ধ করে দেওয়া হয়, কী হবে! তাই ইতিমধ্যেই পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরে চিঠি দিয়ে বকেয়া কর মিটিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছি।’’ তিনি জানান, পুরসভার বার্ষিক বাজেটই যেখানে আড়াই কোটি ছোঁয় না, সেখানে এত পরিমাণ করের টাকা আসবে কোথা থেকে! ঘটনা হল, জল সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ২০টি ওয়ার্ডের প্রায় ৮১ হাজার গ্রাহক। ওই প্রকল্পের মাধ্যমে ফি দিন ১ কোটি ২০ লক্ষ লিটার জল সরবরাহ করে পুরসভা। দিনে চার বার করে জল পৌঁছে যায় বাড়িতে।
পুরসভা সূত্রের খবর, ১ হাজার গ্যালন জল প্রতি আড়াই টাকা দাম ধার্য করে তাতে ১৮ শতাংশ জিএসটি যুক্ত করে বকেয়া জলকরের বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে পোর্ট ট্রাস্ট। মহকুমাশাসক (কাটোয়া) সৌমেন পাল বলেন, ‘‘পোর্ট ট্রাস্টের সংশ্লিষ্ট আধিকারিকের সঙ্গে প্রয়োজনে কথা বলা হবে।’’