এই ঘটনায় পুলিশের সন্দেহ বালি চোরাচালানকারীদের ওপর। প্রতীকী চিত্র।
রাস্তায় পরপর গুলি চালানোয় জখম হয়েছিলেন এক তৃণমূল নেতা ও তাঁর বাবা। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই ঘটনা, দাবি করেন তৃণমূলের একাংশ নেতা-কর্মীরাই। যদিও দলের উপরতলা অভিযোগ মানেননি। রায়নার নতু পঞ্চায়েতের শুকুর গ্রামের ওই ঘটনায় অভিযুক্ত তিন জনের মধ্যে দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃত তরুণ রায় ও হেমন্ত মাঝি ওই গ্রামেরই বাসিন্দা। তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত তাঁরা। পুলিশের দাবি, আর এক অভিযুক্ত সৌমেন রায়ের লাইসেন্সপ্রাপ্ত রিভলবার থেকেই গুলি চালানো হয়েছিল। যদিও তাঁর খোঁজ মেলেনি। এ দিন ধৃতদের বর্ধমান আদালতে তোলা হলে সাত দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়।
তবে কেন এত দ্বন্দ্ব, কোন লাভের গুড়ের টানে দলাদলি, উঠেছে সেই প্রশ্ন। বালিঘাটের দখল, তার সঙ্গে পঞ্চায়েতের ক্ষমতার রাশ হাতে রাখাই দ্বন্দ্বের কারণ, দাবি করেছেন বিরোধীরা।
এর মধ্যেই একটি অডিয়ো-বার্তা সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে (যার সত্যতা আনন্দবাজার পত্রিকা যাচাই করেনি)। সেখানে এক জনকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘রায়নায় বালি ঘাট চলবে, কেউ জানতে পারবে না, সেটা হয় নাকি! চারটে ঘাট আমাদের থাকলে ওরাও চারটে পাক না! কিন্তু আমাদের তো চারটে ঘাট দিতে হবে। একতরফা চলবে না। এক তরফা হলেই মানুষ খুন হবে’। ওই অডিয়োতেই এক জনকে বলতে শোনা যায়, ‘নতু, হিজলনা, নাড়ুগ্রাম, শ্যামসুন্দর আমাদের দিকে থাকতে হবে। শম্পা ধাড়ার গ্রিপে রাখতে হবে’। যদিও বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মুখে কুলুপ এঁটেছেন তৃণমূল নেতারা। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজনের দাবি, ‘‘ওই কথোপকথন কয়েক মাস আগের। বুধবার রাতের ঘটনার সঙ্গে বালির কোনওসম্পর্ক নেই।’’
যদিও বিধায়কের অনুগামীদের দাবি, রায়না ১ ব্লকের বেশ কয়েকটা পঞ্চায়েত এলাকায় বালি ঘাটের দখল নিয়ে গোলমাল শুরু হয়েছে। কমিটিও গঠন করা হয়েছে। শম্পা বলেন, ‘‘অনেক কিছুই শোনা যায়। দলের স্বার্থে প্রকাশ্যে কিছু বলা যায় না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়গুলি জানানো হয়েছে।’’ তৃণমূলের রায়না ১ ব্লক সভাপতি বামদেব মণ্ডলের দাবি, ‘‘রায়না ২ ব্লকেও অনেকটা জায়গা জুড়ে বালি ওঠে। তাহলে সেখানেও দ্বন্দ্ব হওয়ার কথা। এখন বালির চেয়েও পঞ্চায়েতে বেশি টাকা আসে। সেই কারণই পঞ্চায়েত দখল করাটাইমূল লক্ষ্য।’’
বিজেপির বর্ধমান সাংগঠনিক জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্রের দাবি, ‘‘রায়না, জামালপুর, খণ্ডঘোষ, মঙ্গলকোট, মাধবডিহি, গলসি থানার বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েতের নিয়ন্ত্রক ভূমিকায় থাকে বালি-খাদান। তৃণমূলের নেতারা জানেন, বালি খাদান দখলে থাকলে পঞ্চায়েতে ক্ষমতা আসবে। আর পঞ্চায়েত ক্ষমতায় থাকলে বালি খাদানের খাজানা খুলে যাবে।’’ জেলা পুলিশের অবশ্য দাবি, বালি কারবার এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত।