আটক করা তেল। নিজস্ব চিত্র।
আবার ভেজাল সর্ষের তেল তৈরির কারবার সামনে এল পূর্ব বর্ধমান জেলায়।
সোমবার শক্তিগড় থানার পুলিশ ভেজাল সর্ষের তেল তৈরি করে তা খোলা বাজারে বিক্রি করার অভিযোগে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতেরা হলেন রাজকুমার সাউ ওরফে রাজু, দীপককুমার সিং, অবদেশ কুমার, অনিতকুমার রায় ও বিশরাম যাদব। রাজকুমারের বাড়ি বর্ধমান শহরের বাদশাহী রোডে। বাকিরা বিহারের ওলাপুর, সারাইয়ারঙ্গন ও উত্তরপ্রদেশের আজমগড় জেলার ছোয়েটা গ্রামের বাসিন্দা।
পুলিশের দাবি, রাইস অয়েল ভর্তি একটি ট্যাঙ্কার, প্রচুর পরিমাণ ভেজাল সর্ষে তেল, খালি তেলের টিন, রাসায়নিক, রং ও বিভিন্ন কোম্পানির তেলের লেবেল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ধৃতদের কাছ থেকে প্রায় ১ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। ধৃতদের ব্যবহৃত একটি মোটরবাইক ও স্কুটার বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা রুজু করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার ধৃতদের বর্ধমান সিজেএম আদালতে পেশ করা হয়। আরও ভেজাল তেল উদ্ধারের জন্য, কারবারের বিষয়ে বিশদে জানতে এবং বাকি জড়িতদের হদিস পেতে রাজকুমারকে সাত দিন নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়ে আদালতে আবেদন জানায় পুলিশ। পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজত হয়। বাকিদের বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠিয়ে ১৬ জানুয়ারি ফের আদালতে পেশের নির্দশ দেন বিচারক।
মাস চারেক আগে বর্ধমান শহরের লাকুর্ডিতে ভেজাল সর্ষের তেলের কারখানার হদিস পায় জেলা দুর্নীতি দমন শাখা। উদ্ধার হয় প্রচুর পরিমাণ ভেজাল তেল। গ্রেফতার হয় কয়েক জন। কয়েক সপ্তাহ আগে মেমারি থানার পুলিশ ভেজাল তেল তৈরির কারবারে যুক্ত অভিযোগে কয়েক জনকে গ্রেফতার করে।
তার পরেও শক্তিগড়ে ভেজাল তেলের কারবারিরা সক্রিয় থাকায় সাধারণ মানুষজন দুশ্চিন্তায়। পুলিশের দাবি, সোমবার রাতে অশ্বত্থগড়িয়ায় একটি জায়গায় তেলের ট্যাঙ্কারের সামনে দু’জনকে মোটরবাইক ও স্কুটার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাদের সন্দেহ হয়। পুলিশ তেলের ট্যাঙ্কারের বিষয়ে তাঁদের কাছে খোঁজ করে। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জানান, ট্যাঙ্কার থেকে রাইস অয়েল পাশের একটি গোডাউনে নিয়ে যাওয়া হবে। কেন গোডাউনে তেল নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তার সদুত্তর না মেলায় পুলিশ তাঁদের আটক করে গোডাউনে হানা দেয়।
পুলিশের দাবি, গোডাউনে গিয়ে তারা দেখে, রাইস অয়েলের সঙ্গে রং, রাসায়নিক ও অন্যান্য জিনিসপত্র মিশিয়ে ভেজাল সর্ষের তেল তৈরি করা হচ্ছিল। গোডাউন থেকে পুলিশ দু’লিটার রাসায়নিক, ৬১৬টি বিভিন্ন কোম্পানির তেলের টিন, ৭০০টি খালি তেলের টিন, বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক বাজেয়াপ্ত করে। এক লিটারের ১,৪০০টি খালি প্লাস্টিকের বোতল, টিন ‘সিল’ করার যন্ত্র, তেলের বিভিন্ন কোম্পানির লেবেল পায় পুলিশ। শক্তিগড় থানার এক অফিসার দাবি করেন, ধৃতেরা ভেজাল সর্ষের তেল খোলাবাজারে বিক্রি করত। চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে এই কারবারে জড়িত।