এখানেই অবৈধ বালি খাদান চলছিল বলে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র
মাস তিনেক আগেই বালিবোঝাই ট্রাক উল্টে মারা গিয়েছিলেন একই পরিবারের পাঁচ জন। প্রশাসন নড়ে বসায় বাঁধের উপর দিয়ে গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় গলসির শিকারপুরের বহু বৈধ ও অবৈধ বালিখাদান। কিন্তু নজরদারি ঢিলে হতেই ফের বেআইনি খাদানগুলি রমরমিয়ে চলছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। শুক্রবার সকালে গলসি ১ ব্লকের শিল্ল্যা এলাকার একাধিক খাদানে অভিযান চালান পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা। চারটি অবৈধ খাদান চিহ্নিত করে বন্ধ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এলাকায় গিয়ে কর্তাদের নজরে আসে শিল্ল্যায় দামোদরের গর্ভে প্রায় ১২টি বালি খাদান চলছে। তার মধ্যে চারটি বেআইনি। ওই মালিকেরা খাদান লিজ় নেওয়ার কোনও বৈধ কাগজপত্রও দেখাতে পারেননি। গলসি ১ ব্লক প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, ভৌগলিক ভাবে নদের উপরের অনেক খাদানেরই অবস্থান বাঁকুড়ায়। ফলে, ওই জেলার পাত্রসায়র ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংসস্কার দফতর সেগুলি নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু তাঁদের নজর এড়িয়েই চলছে খাদান। গলসি ১ ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক মিন্টু বালা বলেন, “বেআইনি ভাবে চারটি বালি খাদান চলছে। সেগুলি অবিলম্বে বন্ধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর পরেও যদি খাদানগুলি চলে তা হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে এফআইআর করা হবে।”
যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, প্রশাসনের কর্তারা চলে গেলেই খাদান চালু হয়ে যাবে। তাঁরা জানান, শিকারপুরের ওই ঘটনার পরে ৮টি বৈধ খাদান ও গলসি ১ ও ২ ব্লকের সমস্ত অবৈধ খাদান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শিকারপুরের বৈধ খাদান বন্ধ থাকলেও গত এক মাস ধরে শিল্ল্যার বেআইনি খাদানগুলি চলছে। এতে এক দিকে যেমন রাজস্বে ক্ষতি হচ্ছে, তেমনই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাস্তা। দিন কয়েক আগে অতিরিক্ত বালি নিয়ে যাওয়ার প্রতিবাদে রাস্তা অবরোধও করেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। তৃণমূলের কিছু নেতা-কর্মীও এতে জড়িত বলে অভিযোগ তাঁদের।
যদিও দলের কেউ যুক্ত থাকার কথা মানতে নারাজ ব্লক তৃণমূল। দলের ব্লক সভাপতি (গলসি ১) শেখ জাকির হোসেন বলেন, “দলের কেউ অবৈধ বালি কারবারে যুক্ত কি না আমার জানা নেই। কেউ যুক্ত থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ ও প্রশাসন অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।” গলসি ১ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ ফজিলা বেগমের আবার দাবি, “ওই এলাকায় অবৈধ ভাবে বালি তোলার অভিযোগ প্রথম নয়। বারবার প্রশাসনকে জানালেও ব্যবস্থা হয়নি।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শিকারপুরের ঘটনার পরে, অবৈধ খাদান থেকে বালি তোলা বন্ধ করতে ঢালের (খাদান থেকে দামোদরের বাঁধে উঠার রাস্তা) মুখে বাঁশ বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আজও তা হয়নি। ফলে, রমরমিয়ে চলছে বালি তুলে যাতায়াত। গলসি ১-এর বিডিও বিনয়কুমার মণ্ডল বলেন, “কোনও অবৈধ খাদান চলতে দেওয়া হবে না। যাঁরা এই কারবারে যুক্ত, তাঁদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”