Paddy Field

ধান কাটার মরসুমে বাদামি শোষকের হানা, চিন্তায় জেলার চাষিরা

এ বছর আমন ধানের মরসুমে জেলায় চাষ হয়েছে মাত্র সাড়ে ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে। শুরু থেকে বৃষ্টির ঘাটতি থাকায়, সে ভাবে চাষের কাজ শুরু করতে পারেননি কৃষকেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাঁকসা শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২২ ০৯:৪৪
Share:

বাদামি শোষক পোকা। ফাইল চিত্র

এ বছর খামখেয়ালি বৃষ্টিপাতের জন্য বিশেষ বেগ পেতে হয়েছে পশ্চিম বর্ধমান জেলার ধান চাষিদের। সেই ধাক্কা কিছু সামলে উঠলেও, ধান কাটার মরসুমে নতুন বিপদ দেখা দিয়েছে বাদামি শোষক পোকা। যা নিয়ে চিন্তিত জেলার, বিশেষ করে কাঁকসা ও দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের চাষিরা। এই সমস্যা থেকে বাঁচতে দফতরের তরফে কৃষকদের নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেনআধিকারিকেরা।

Advertisement

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর আমন ধানের মরসুমে জেলায় চাষ হয়েছে মাত্র সাড়ে ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে। শুরু থেকে বৃষ্টির ঘাটতি থাকায়, সে ভাবে চাষের কাজ শুরু করতে পারেননি কৃষকেরা। অগস্ট মাসের শেষ দিকে ভাল বৃষ্টিপাত হওয়ায়, চাষের পরিস্থিতি কিছুটা বদলায়। কৃষি দফতর সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, এ বছর জেলায় আমন ধানের চাষ হয়েছে মূলত কাঁকসা ও দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকে হয়েছে। অন্য ব্লকে জলের অভাবে চাষের কাজ খুব একটা করতে পারেননি কৃষকেরা।

এই সময় ধান পাকতে শুরু করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, কাঁকসারত্রিলোকচন্দ্রপুর, দোমড়া, বনকাটির মতো বেশ কিছু এলাকায় বাদামি শোষক পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। কৃষকদের দাবি, বেশ কিছু জমির ফসল ইতিমধ্যে নষ্টও হয়ে গিয়েছে। বাদামি শোষক ধান গাছের রস শুষে নেয়। ফলে, পুরো ধান গাছটিই শুকিয়ে সাদা যায়। আর একবার এই পোকাকোনও ধান জমিতে আক্রমণ করলে, অনেকটাই ফসল নষ্ট হয়ে যায়।

Advertisement

দোমড়ার চাষি তাপস মাজি জানান, এ বছর তিনি প্রায় ১১ একর জমিতে ধান চাষ করেছেন।তাঁর দাবি, মোট ফসলের প্রায় ৪০ শতাংশ ধান নষ্ট হয়েছে এই পোকার আক্রমণে। তিনি বলেন, “বিভিন্ন রকমের কীটনাশক দেওয়ার পরেও, এই পোকার উপদ্রব বন্ধ করা যাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত কী হবে বুঝে উঠতে পারছি না।”দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের চাষি উদয় মণ্ডল প্রায় ১০ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন। তিনি বলেন, “১০ শতাংশের মতো অংশ এই পোকার কবলে চলে গিয়েছে।” কৃষকেরা জানিয়েছেন, প্রতি বছরই শোষক পোকারআক্রমণ হয়। তবে এ বছর সংখ্যাটা বেশি মনে হচ্ছে।

বাদামি শোষক পোকার আক্রমণ বেশি হওয়ার কারণ কী? কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই পোকার বংশবৃদ্ধির জন্য এই আবহাওয়া উপযুক্ত। দিনের তাপমাত্রা যদি ৩০ ডিগ্রির আশপাশে থাকে এবং আর্দ্রতা যদি ৭০ শতাংশ হয়, সেখানে শোষকের আক্রমণ বাড়ে। এ বছর এখনও পর্যন্ত সে রকমই আবহাওয়া রয়েছে। তাই বাদামি শোষকের আক্রমণ বাড়ছে।

এর হাত থেকে ফসল বাঁচানোর জন্য বেশ কিছু পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে দফতরের তরফে। যেমন, প্রতিটি জমির ধানের সারিকে (পাশ ঠেলা) আলাদা করে রাখতে হবে। যাতে জমিতে আলো ও হাওয়া নীচে পর্যন্ত যেতে পারে। এতে শোষক পোকার আক্রমণ কমানো যেতে পারে। কোনও জমির ধান ৭০ শতাংশ পেকে যায়, তা কেটে ফেলতে হবে। রাসায়নিক ‘স্প্রে’ করার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে, যেন গাছের গোড়ায় ওই রাসায়নিক পৌঁছয়। আর স্প্রে করতে হবে জমির আল থেকে চক্রাকারে। যাতে স্প্রে করার সঙ্গে সঙ্গে শোষক পোকা অন্য জমিতে উড়েযেতে না পারে। এ ছাড়া, ‘অ্যাসিফেট’ জাতীয় কীটনাশক দেড় থেকে দু’গ্রাম প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করাতে হবে। আরও বেশ কিছু কীটনাশক রয়েছে, যেগুলি জমিতে স্প্রে করা যেতে পারে।

এ দিকে, কৃষি দফতরের কাঁকসা ব্লকের আধিকারিক অনির্বাণ বিশ্বাস সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে বলেন, “আমরা ইতিমধ্যেই চাষিদের এ সব বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছি। প্রয়োজন হলে চাষিরা কৃষি দফতরের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারেন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement