হুল্লোড়: উপরে, ব্যারাজের শুকনো অংশে ছবি তোলা। নীচে, এ ভাবেই ভিড় জমাল জনতা। ছবি: বিকাশ মশান
দৃশ্য এক: রবিবার, সকাল ৯টা। দুর্গাপুরের বীরভানপুর ঘাট দিয়ে এসে সোজা দুর্গাপুর ব্যারাজের শুকনো অংশে নেমে পড়লেন পাঁচ তরুণী। হাতে মোবাইল। নানা ভঙ্গিতে চলল নিজস্বী তোলা। দূরত্ববিধি, ‘মাস্ক’ পরা, এ সব তো দূরঅস্ত্।
দৃশ্য দুই: দামোদরের চরায় সপরিবার ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন দুর্গাপুরের স্টিল টাউনশিপের বাসিন্দা অমিয় বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন এসেছেন জানতে চাওয়াতে উত্তর, ‘‘এমন শুকনো ব্যারাজ, এ দৃশ্য তো আর রোজ দেখা যায় না। তাই এসেছি!’’
— শুধু এক-দু’টি দৃশ্য নয়। রবিবার দিনভর জনতার ‘শুকনো’ ব্যারাজ দেখার এমন নানা ছবিই সামনে এসেছে। ব্যারাজের দু’ধারে চলেছে বাদাম, চা-সহ নানা খাবার বিক্রিও। পরিস্থিতি সামাল দিতে সমস্যায় পড়েছে পুলিশ। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও দূরত্ববিধি ভেঙে, ‘মাস্ক’ না পরে জনতার এমনই নানা ‘উৎসাহ’ দেখা গেল। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গিয়েছে, ব্যারাজের দুর্গাপুরের দিকের অংশে জল প্রায় না থাকায় সহজেই নীচে নেমে যাচ্ছে জনতা। কড়া পুলিশি নজরদারি রয়েছে। কিন্তু সেই নজরদারির ফাঁক গলেইচলছে হুল্লোড়।
ব্যারাজ এলাকায় কিছু দূর এগোতেই দেখা গেল, এক জেলে মাছ ধরে আনছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখা গেল, ওই জেলেকে কার্যত ছেঁকে ধরলেন কয়েকজন। কত দর, সে সব জানতে চাইলেন। এক ‘ক্রেতা’র বক্তব্য, ‘‘এখানে একটু সস্তায় মাছ পাব। তা ছাড়া মাছ টাটকাও হবে নিশ্চয়।’’ কাছেই দেখা গেল, এক মহিলা পোষ্যকে সঙ্গে করে ‘খোলা হাওয়া’য় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অনেকেই বীরভানপুর মাঠে মোটরবাইক, গাড়ি রেখে হেঁটে আসছেন ব্যারাজে।
এই পরিস্থিতির ‘খবর’ পেয়ে বাঁকুড়ার বড়জোড়া থেকে ঝালমুড়ি নিয়ে এসেছিলেন সন্দীপ মণ্ডল। তাঁর কথায়, ‘‘করোনার জেরে বহু দিন কোথাও মেলা হয়নি। তবে ব্যারাজ দেখতে যে ভাবে মানুষ আসছেন, তাতে আমার ব্যবসা মন্দ হচ্ছে না।’’
তবে, পরিস্থিতির সামাল দিতে পুলিশি-ব্যবস্থাও নজরে পড়েছে। বীরভানপুরের কাছে দুর্গাপুরের কোকআভেন থানার পুলিশ ‘পিকেটিং’ করেছে। ব্যারাজের দুই প্রান্ত, পশ্চিম বর্ধমানের দিকে কোকআভেন থানা এবং অন্য দিকে বাঁকুড়ার বড়জোড়া থানার পুলিশকর্মীরা দিনভর মোতায়েন রয়েছেন। পাশাপাশি, পুলিশ ব্যারাজের সেতুর উপরে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ এবং সেতুর উপরে যাতে কেউ না দাঁড়িয়ে পড়েন, তা-ও দেখছে। যদিও পুলিশকর্তাদের একাংশের আক্ষেপ, জনসাধারণকে বারবার ভিড় না করার জন্য বলা হচ্ছে। কিন্তু তার পরেও হুঁশ ফিরছে না জনতার। তবে পুলিশ সুপার (বাঁকুড়া) কোটেশ্বর রাও বলেন, ‘‘ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হয়নি। পরিস্থিতির দিকে আমরানজর রাখছি।’’