কুলটির চিনাকুড়িতে বিক্ষোভে শ্রমিকেরা। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
প্রায় ন’মাস ধরে উৎপাদন বন্ধ কুলটির চিনাকুড়ির একটি তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে। ফলে সংস্থার প্রায় ৯০ জন ঠিকা শ্রমিক ন’মাস বেতন পাচ্ছেন না। দ্রুত উৎপাদন শুরুর দাবিতে সোমবার তৃণমূলের নেতৃত্বে সংস্থার গেটে বিক্ষোভ অবস্থান করলেন শ্রমিকেরা।
চিনাকুড়ির নয়-দশ নম্বর এলাকায় ১২ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বেসরকারি ওই তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি রয়েছে। সোমবার সকাল থেকে ওই কেন্দ্রের মূল গেটে বিক্ষোভ অবস্থান শুরু করেন তৃণমূলের প্রায় শ’তিনেক সদস্য, সমর্থক। কর্মসূচিতে যোগ দেন বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্থায়ী ও অস্থায়ী শ্রমিকেরাও। আধিকারিকেরা কেন্দ্রের ভিতরে ঢুকতেও বাধা পান বলে অভিযোগ।
সংস্থার স্থায়ী কর্মী তথা তৃণমূল নেতা শুভেন্দু গাঁতাইতয়ের অভিযোগ, গত বছর জুন থেকে এখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে না। এই অবস্থায় স্থায়ী শ্রমিকদের বেতন দেওয়া হলেও ঠিকা শ্রমিকেরা বেতন পাচ্ছেন না। ফলে তাঁরা ব্যাপক সমস্যায় পড়েছেন। অশোক রায় নামে তেমনই এক জন বলেন, ‘‘বেতন না মেলায় দিনমজুরি করতে হচ্ছে। বন্ধ হতে বসেছে সন্তানদের লেখাপড়া।’’ শ্রমিকদের অভিযোগ, উৎপাদন চালু করার জন্য বারবার কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হয়েও লাভ হয়নি। ঠিকাকর্মীদের আরও অভিযোগ, অন্য কোথাও কাজ দিয়ে তাঁদের বেতন দেওয়ার অনুরোধ করা হলেও লাভ হয়নি।
কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ কেন? আধিকারিকদের একাংশের সূত্রে জানা যায়, কিছু প্রশাসনিক জটিলতা থাকায় ‘কোল ইন্ডিয়া’ থেকে বেসরকারি সংস্থাটি নিলামে কয়লা কিনতে পারছে না। আবার বেসরকারি খনি থেকে চড়া দামে কয়লা কিনে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ অনেক বেশি পড়ছে। ফলে সংস্থাটি লাভের পরিবর্তে ক্ষতির মুখে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সংস্থার পার্সোনেল ম্যানেজার পার্থ চট্টরাজ বলেন, ‘‘সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্য সরকারি স্তরে আলোচনা করা হচ্ছে। আশা করি দ্রুত সমস্যা মিটবে।’’ তাঁর আশ্বাস, ঠিকাকর্মীদের অন্য কোথাও কাজে লাগিয়ে খানিকটা হলেও আর্থিক সমস্যা মেটানোর বিষয়ে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।
এ দিন এই বিষয়ে কুলটির বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কর্তৃপক্ষকে ডেকে পাঠিয়ে তাঁদের সমস্যাগুলি শুনে সমাধানের জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।’’ তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, কয়লার যে অভাবের কথা উৎপাদন বন্ধের কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, তা ঠিক নয়। তাঁদের অভিযোগ, বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে প্রতি ইউনিটে যে খরচ হবে, তার থেকে অনেক কম দামে ডিভিসি থেকে বিদ্যুৎ কিনে এলাকায় সরবরাহ করে মোটা টাকা লাভ করতে পারবে। তার জন্যই উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে এই অভিযোগ ঠিক নয় বলে দাবি পার্থবাবুর।