পশ্চিম বর্ধমানের সালানপুরের রাধাডি গ্রামের বেহাল শৌচাগার। ছবি: পাপন চৌধুরী
শৌচাগার আছে, কিন্তু জল নেই। নেই দরজাও! বাড়ি-বাড়ি জল-সংযোগ থাকলেও জল পড়ে না। সালানপুরের সামডি পঞ্চায়েতের অন্তর্গত রাধাডিহি বস্তিতে দাঁড়িয়ে কথাগুলি বলছিলেন এক প্রবীণ।— দুয়ারে পঞ্চায়েত ভোট। তার আঁচও লেগেছে এই এলাকায়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দেওয়াল লিখন আছে,আছে প্রচারও।
সামডি খোলামুখ খনিকে ডান হাতে রেখে পিচ ঢালা রাস্তাটি সোজা চলে গিয়েছে মুক্তাইচণ্ডীর দিকে। মুক্তাইচণ্ডীর ঠিক একশো মিটার আগে বাঁ হাতে ঢালু জমি বরাবর নেমে গিয়েছে হাড়পাঁজরা বেরোনো কংক্রিটের রাস্তা। সে পথে কিছুটা গেলেই রাধাডিহি বস্তি। বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, দিনমজুরিই তাঁদের আয়ের একমাত্র উৎস। হতদরিদ্র পরিবারের সদস্যেরা প্রায় সকলেই সরকারের জনমুখী প্রকল্প ও পরিষেবার উপরে নির্ভরশীল। কিন্তু অভিযোগ, সে সব মেলে না তেমন।
বস্তিতে ঢোকার মুখেই কলতলা। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, হাঁড়ি, কলসি, বালতি, ডেকচি নিয়ে মহিলা, পুরুষ, শিশুরা দাঁড়িয়ে। শিল্পাঞ্চলের রোদ-জলে সারা বছর এটাই চিত্র। বছর আটেকের অমৃতা মারাণ্ডি মাঝারি মাপের একটি হাঁড়িতে জল ভরছিল। বলে, “মা-বা কাজে গিয়েছে। জল ভরে নিয়ে স্কুল যাব দ্রুত। খুব খিদে পেয়েছে। তাড়াতাড়ি স্কুলে না গেলে মিড-ডে মিল পাব না!” এলাকাবাসী জানান, এক বছর আগে পাইপলাইন পেতে জলের গৃহ-সংযোগ দেওয়া হলেও বাড়ির কলে জল পড়ে না। ট্যাঙ্কারে করে জল সরবরাহ করা হলেও তা অনিয়মিত। স্থানীয় বাসিন্দা কল্পনা তুড়ি বলেন, “সকাল-বিকেল ঘণ্টার পর ঘণ্টা কলতলায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।”
রাধাডিহিতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, ‘নির্মল বাংলা’ প্রকল্পে কিছু শৌচাগার তৈরি করেছে পঞ্চায়েত। কিন্তু রানু ভুঁইয়া নামে এক বৃদ্ধা জানালেন, শৌচাগারে দরজা বসানো হয়নি। জল-সংযোগও নেই। তাই শৌচাগার ব্যবহার করা যায় না। তাঁর কথায়, “দরজা বসানোর জন্য সাতশো টাকা চেয়েছিল। কিন্তু আমি তা দিতে পারিনি।”
এ দিকে, সামডি পঞ্চায়েতেরই রাধাবলমপুর বস্তির অবস্থা আরও করুণ। ইসিএলের আবাসন লাগোয়া এই বস্তি। এলাকাবাসীর সূত্রে জানা গেল, ইসিএলের বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ না নিলে বাতি জ্বলবে না এখানে। পানীয় জল মেলে ইসিএলের পাইপলাইন থেকে। এলাকার বাসিন্দা অশীতিপর শান্তি হেলা বলেন, “রেশন কার্ড নেই। বিধবাভাতা পাই না। পঞ্চায়েতে বহু বার বলেছি।লাভ হয়নি।”
এ দিকে, পরিকাঠামোগত এবং নাগরিক পরিষেবার অনুন্নয়ন নিয়ে রাজনৈতিক তরজা কিন্তু রয়েছে এলাকায়। দু’বস্তিই জেলা পরিষদের ১৬ নম্বর আসনের অন্তর্গত। এখান থেকে সিপিএমের প্রার্থী চায়না মালাকার, তৃণমূলের বেবি মণ্ডল, বিজেপির পায়েল বাউড়ি। চায়না ও পায়েল কার্যত এক যোগেই অভিযোগ করেন, “অত্যন্ত অনুন্নত এলাকা। পঞ্চায়েত বস্তি এলাকার উন্নয়নে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। প্রচারে আমরা সে কথা বলছিও।” যদিও, বেবির বক্তব্য, “একটা সময় জল ও বিদ্যুৎ ছিল না ওই বস্তিগুলিতে। পঞ্চায়েতের উদ্যোগেই তা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আরও নানা জনমুখী প্রকল্পের সুফল এলাকাবাসী পাচ্ছেন।” পাশাপাশি, তৃণমূল পরিচালিত সামডি পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান জনার্দন মণ্ডলের বক্তব্য, “গত পাঁচ বছরে বহু কাজই হয়েছে। মানুষের নিত্য চাহিদা বাড়ছে। এ বার সে মতো কাজ অবশ্যই করা হবে।”→ (চলবে)