বাঁ দিকে, খাদানের পাশে থাকা এই রাস্তাগুলি নিয়েই আশঙ্কা। ডান দিকে, ঘটনা নিয়ে এলাকায় চর্চা। ছবি: পাপন চৌধুরী
পরিত্যক্ত পাথর খাদান থেকে একই পরিবারের চার জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে আসানসোলের কাল্লায়। রবিবারের ওই ঘটনার পরেই এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এর আগেও বার বার পরিত্যক্ত খাদানে দেহ ভেসে উঠেছে। সোমবার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এলাকায় এমন পরিত্যক্ত খাদান আরও রয়েছে। সেগুলি দ্রুত ভরাট করা হোক। তবে, এ দিনও দেখা গিয়েছে, খাদানের গা ঘেঁষে যাওয়া রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে বাসিন্দাদের।
যে খাদান থেকে ওই চার জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে, সেখান থেকেই ২০১৯-এ দুই কিশোরীর দেহ উদ্ধার হয়েছিল। তাঁরা ছাতাপাড়ারই বাসিন্দা ছিলেন। সে বারও এলাকাবাসী খাদান ভরাটের দাবি জানিয়েছিলেন। এর পরে ধাদকার বিবেকানন্দ মঠ লাগোয়া এলাকার জলভর্তি একটি পরিত্যক্ত খাদানে ২০২১-এ গাড়ি-সহ তলিয়ে যান এক ব্যক্তি। ওই ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরে গাড়ি ও চালকের দেহ উদ্ধার হয়।
রবিবার ফের একই ঘটনার পরে, খাদান লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা মিরা দেবী বলেন, “রাস্তার দু’পাশে দু’টি খাদান আছে। যাতায়াত করতে ভয় লাগে। বাসিন্দাদের নিরাপত্তার কারণেই এগুলি বুজিয়ে দেওয়া বা অন্য কোনও পদক্ষেপ করা উচিত।” পুষ্পা দেবী নামে অন্য এক জনের ক্ষোভ, “আলো না থাকায় রাতে ওই রাস্তা দিয়ে চলাচল করাটা খুবই বিপজ্জনক। বহু বার স্থানীয় কাউন্সিলরকে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছি। লাভ হয়নি।” এলাকায় গিয়ে জানা গেল, ছাতাপাড়া, মাজিপাড়া, চাষিপাড়া-সহ প্রায় ছ’টি বস্তির বাসিন্দারা এই রাস্তাটি ব্যবহার করেন। রাস্তার দু’পাশে দু’টি গভীর পরিত্যক্ত খাদান আছে। দক্ষিণে আরও কিছুটা এগোলে আরও একটি গভীর খাদান রয়েছে। রাস্তা ঘেঁষেই রয়েছে খাদানের দেওয়াল। একটু বেসামাল হলেই বিপদের আশঙ্কা সব সময়। অথচ, বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গিয়েছে, এমন বিপজ্জনক রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন প্রায় আড়াই হাজার বাসিন্দা ও কয়েকশো মোটরবাইক, স্কুটার যাতায়াত করে।
বাসিন্দাদের ক্ষোভের কথা টের পেয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর উৎপল সিংহ। তিনিও বলেন, “বর্ষায় রাস্তায় মাঝেমধ্যে ধস নামে। তখন পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ হয়ে যায়। আমিও দাবি জানাচ্ছি, খাদানগুলি ভরাট করা হোক। পুরসভার আগামী বোর্ড বৈঠকে বিষয়টি তুলব।”
এ দিকে, রাজ্য সরকারের ‘মাইনস অ্যান্ড মিনারেল’ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, খাদানগুলি কয়েক দশকের পুরনো। একসময় অবৈধ ভাবে এই খাদানগুলি চালানো হয়েছে। ফলে, সামাজিক সুরক্ষার বিষয়টি একেবারেই তোয়াক্কা করা হয়নি। রাস্তার গা ঘেঁষে খাদানগুলি খোঁড়া হয়েছে। এর ফলে, লাগোয়া জনবসতিগুলিবিপজ্জনক হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে আসানসোলের পুর-কমিশনার রাহুল মজুমদার বলেন, “সমস্যাটি নিয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। খাদানগুলি এখন জলে পূর্ণ। তাই সেখানে পুরসভার বিভিন্ন এলাকা থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে ফেলা সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ দূষণের অভিযোগ করে ব্যবস্থা নিতে পারে।” এ দিকে, পুরসভার মেয়র বিধান উপাধ্যায় বলেন, “খাদানগুলির চারপাশে লোহার রেলিংয়ের বেড়া দেওয়া হলে সমস্যা অনেকটাই মিটতে পারে।” তাঁর আশ্বাস, স্থানীয় কাউন্সিলরের তরফে আগামী বোর্ড বৈঠকে কোনও প্রস্তাব এলে, তা ভাবা হতে পারে। তা না হলেও, পুরসভা এ বিষয়ে আলোচনা করবে।