বন্ধ পঞ্চায়েত ভবন। নিজস্ব চিত্র
পঞ্চায়েতে ন’জন সদস্য। তার মধ্যে আট জনেরই সদস্য পদ বাতিল। প্রত্যেকেই তৃণমূলের। সলতে জ্বালিয়ে রেখেছেন সিপিএমের একমাত্র পঞ্চায়েত সদস্য। ফলে, ‘সরকারি ভাবে’ই গত ন’মাস ধরে সমস্ত রকম পরিষেবা থেকে বঞ্চিত ভাতারের আমারুণ ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দারা। প্রশাসক বসানোর দাবি উঠলেও তা আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে ধন্দে প্রশাসনই।
গত নভেম্বরে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে তৃণমূলের আট পঞ্চায়েত সদস্যের পদ বাতিল হয়ে যায়। বোর্ডও ভেঙে যায়। তখন থেকেই এই পরিস্থিতি চলছে। যদিও অচলাবস্থাটা আরও আগে থেকে। জানা যায়, আমারুণ ১ পঞ্চায়েত তৃণমূল দখল নেওয়ার বছর খানেকের মধ্যেই প্রধান ও উপপ্রধান গোষ্ঠীর আকচা-আকচিতে পঞ্চায়েত ভবন টানা দেড় বছর তালাবন্ধ ছিল। পরে, সভাধিপতি দু’পক্ষকে নিয়ে মীমাংসা করার পরে পঞ্চায়েত কিছু দিনের জন্য খোলে। ফের বন্ধ হয়ে যায়।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২৮ জুন আস্থা ভোটে হেরে যায় প্রধান আমিরুন্নেসা বেগম। ক্ষমতা যায় উপপ্রধান প্রদ্যুৎ রায়ের কাছে। এর মধ্যেই প্রধানের গোষ্ঠীর লোকজন হাইকোর্টে মামলা করে জানায়, প্রদ্যুৎ রায়-সহ পাঁচ জন পঞ্চায়েতের ১০টি বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী পরপর তিনটি বৈঠকে অজ্ঞাত কারণে হাজির না হলে সদস্য পদ খারিজ হয়ে যায়। প্রদ্যুৎবাবুও হাইকোর্টে পাল্টা দাবি করেন, পঞ্চায়েত প্রধান-সহ তিন জন পরপর কয়েকটি বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন। ফলে তাঁদেরও সদস্য পদ বাতিল হওয়া উচিত। হাইকোর্ট জেলাশাসককে বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। তৎকালীন জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন তদন্ত করে গত নভেম্বরে আট জনেরই সদস্য পদ বাতিল করেন।
তৃণমূল সূত্রের খবর, প্রাক্তন প্রধান ও উপপ্রধান— দুই গোষ্ঠীই পরস্পরের দিকে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে। দু’পক্ষের দূরত্ব এতটাই বেড়েছিল যে নেতারাও সামাল দিতে পারেননি। তার ফল ভুগতে হচ্ছে সাধারণ বাসিন্দাদের। পঞ্চায়েত খোলা থাকলেও তা কার্যত অচল। বাসিন্দাদের ক্ষোভ, বাসস্থানের শংসাপত্র কিংবা আয়ের শংসাপত্র মিলছে না। এমনকী, জন্ম-মৃত্যুর শংসাপত্রও পেতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হচ্ছে। স্থানীয় শঙ্কর রায়, মহম্মদ ইয়াসিনদের ক্ষোভ, “তৃণমূল আসার পর থেকে পঞ্চায়েতের কোনও কাজই দেখলাম না।” শৌচাগার তৈরি থেকে ১০০ দিনের কাজও বন্ধ।
এ অবস্থায় প্রশাসন বসানোর দাবি জানিয়েছেন শাসক, বিরোধী থেকে সাধারণ বাসিন্দারা। বিডিও প্রলয় মণ্ডল বলেন, “প্রশাসক বসাতে জেলাশাসক পঞ্চায়েেত দফতরে দু’বার চিঠি দিয়েছেন। উত্তর আসেনি।”