কাউন্সিলরকে ঘেরাও। নিজস্ব চিত্র
‘অবৈধ’ কুয়ো খাদান খুঁড়তে গিয়ে গ্রামের তিন ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পরে সোমবার পর্যন্ত গ্রামে দেখা গিয়েছিল শুধু দুশ্চিন্তার আবহ। কিন্তু কুলটির আলডিহির ওই ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পরে, মঙ্গলবার সকালে উদ্ধারকাজ না হওয়ায় উৎকণ্ঠার পাশাপাশি, ক্ষোভপ্রকাশও করেছেন কুলটির আকনবাগানের মাজিপাড়ার লোকজন। স্থানীয় কাউন্সিলরকে ঘেরাও করে বিক্ষোভও দেখানো হয়। পুলিশের অবশ্য দাবি, যন্ত্র নামিয়ে মাটি কেটে নতুন করে উদ্ধারকাজ শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে।
কুলটির আলডিহিতে বিজলিঘর রাস্তা লাগোয়া এলাকায় ওই খাদান খুঁড়তে গিয়ে রবিবার বিকেল থেকে নিখোঁজ হন আকনবাগানের সন্তোষ মারান্ডি, বিনয় মুর্মু, কালীচরণ কিস্কু। তাঁদের সন্ধানে সোমবার সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত উদ্ধারকাজ চলে। কিন্তু উদ্ধারকারী দলের নেতৃত্বে থাকা অশোক রায়, জয়দেব পরীক্ষিতেরা ঘটনাস্থলে প্রচুর পরিমাণে কার্বন মনোক্সাইড মজুত থাকার কথা জানান। পাশাপাশি, সঙ্কীর্ণ খাদান মুখ বাড়ানো না হলে অক্সিজেন সিলিন্ডার-সহ অন্য যন্ত্র নিয়ে খাদানের ভিতরে ঢোকা যাবে না বলেও তাঁরা জানান।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, মঙ্গলবার সকাল থেকে ঘটনাস্থলের আশপাশে দেখা যায়নি ইসিএলের উদ্ধারকারী দলকে। পুলিশ প্রথমে ইসিএলের কাছেই খাদানের মুখ বড় করার জন্য আর্জি জানায়। কিন্তু ইসিএল তা করতে গেলে বিপত্তি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে আগেই জানিয়েছে। এ দিন নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের একাধিক কর্তা জানান, তাঁদের উদ্যোগেই যন্ত্র নামিয়ে মাটি কেটে খাদান-মুখ বড় করা হবে।
তবে বিকেল পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নজরে পড়েনি বলে অভিযোগ মাজিপাড়ার বাসিন্দাদের। এই পরিস্থিতিতে ঘরের ছেলেদের জন্য উৎকণ্ঠা যেমন রয়েছে, তেমনই ক্ষোভ দানা বেঁধেছে গ্রামে। স্থানীয় বাসিন্দা সরযূ মাঝির প্রশ্ন, ‘‘গ্রামের ছেলেদের ফিরিয়ে দিক প্রশাসন। আজ উদ্ধারকাজ বন্ধ রইল কেন?’’ একই কথা শোনা গিয়েছে নিখোঁজ সন্তোষের স্ত্রী সরবুতা ও মা সাধমণি মারান্ডির মুখেও। তাঁদের আর্জি, ‘‘প্রশাসন দ্রুত উদ্ধারকাজ করুক।’’ নিখোঁজ বিনয় মুর্মুর স্ত্রী প্রতিমার প্রশ্ন, ‘‘শুনেছি উদ্ধারকাজ বন্ধ আছে। এটা কেন হল?’’
এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার গ্রামে যান আসানসোল পুরসভার ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নেপাল চৌধুরী। দ্রুত উদ্ধারকাজ শুরুর দাবিতে তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান এলাকাবাসীর একাংশ। প্রকাশ্যেই তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমি শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করছি। আমরাও যন্ত্র এনে মাটি কাটার চেষ্টা করছি।’’ তবে সেই কাজ কখন শুরু হবে, গ্রামবাসীদের এ প্রশ্নের উত্তর তিনি দিতে পারেননি বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়।
গ্রামবাসীর সূত্রে জানা যায়, রবিবার দুর্ঘটনার সময়ে খাদানের মুখ থেকে কোনও রকমে বেঁচে ফেরেন স্থানীয় এক যুবক। বাড়ির উঠোনে বসে ঘটনার কথা বলতে গিয়ে শিউরে উঠছিলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘খানিক দূর থেকে দেখি, খাদানের মুখে ওই তিন জন ধুপধাপ পড়ে গেল। আমি ছুটে যাই। খানিক বাদেই বুঝি, বুকে গ্যাস চেপে বসছে। কোনও রকমে উপরে উঠে আসি।’’