প্রতীকী ছবি
পাঁচ মাস ধরে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে বন্ধ রয়েছে ডায়ালিসিস। বিপাকে পড়েছেন অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবার থেকে আসা রোগীরা। তাঁদের পরিজনেরা জানান, বাইরে প্রায় চার গুণ বেশি টাকা খরচ করে ডায়ালিসিস করাতে হচ্ছে।
মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২০১৩-র শুরুতে দুর্গাপুর (পূর্ব) কেন্দ্রের তৎকালীন বিধায়ক প্রয়াত নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়ের এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে প্রায় ৪০ লাখ টাকা খরচ করে ডায়ালিসিস যন্ত্রটি কেনা হয়। কিন্তু হাসপাতালে উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী না থাকায় ইউনিটটি চালু করা যায়নি। পরে নিখিলবাবু বিষয়টি নিয়ে তদ্বির করেন নানা জায়গায়। শেষমেশ ‘পিপিপি মডেলে’ বেসরকারি সহযোগিতায় ইউনিটটি চালু হয়। ঠিক হয়, পাঁচ শয্যার ইউনিটটির যাবতীয় পরিকাঠামোগত সহযোগিতা দেবে হাসপাতাল। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকবে বেসরকারি সংস্থা।
২০১৫-র জানুয়ারিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দরপত্র ডাকেন। কয়েক মাসের মধ্যে দরপত্রের মাধ্যমে নির্বাচিত সংস্থার নাম চূড়ান্ত করে স্বাস্থ্য দফতরে পাঠান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। স্বাস্থ্য দফতরের ছাড়পত্র আসার পরে ২০১৬-র ২ মার্চ ডায়ালিসিস ইউনিটের উদ্বোধন করেন নিখিলবাবু। কিডনির সমস্যায় ভোগা রোগীদের অনেক বেশি টাকা খরচ করে শহরের বিভিন্ন নার্সিংহোমে ডায়ালিসিস করাতে হত। খরচ হত গড়ে প্রায় আড়াই হাজার টাকা। হাসপাতালে ডায়ালিসিস চালু হওয়ার পরে ৭৬০ টাকার বিনিময়ে ডায়ালিসিস করানোর সুযোগ পান তাঁরা। এ ছাড়া বিপিএল তালিকাভুক্ত রোগীদের জন্য নিখরচায় পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু যে সংস্থাটি ইউনিটটি চালাত, তাদের বকেয়া কয়েক লক্ষ টাকা বাকি পড়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়।
বকেয়া কেন বাকি? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, সমস্যা দেখা দেয় বিপিএল-এর নামে আসা রোগীদের নিয়েই। অনেকেরই বিপিএল কার্ড নেই। স্থানীয় কাউন্সিলর, পঞ্চায়েত সদস্যের কাছ থেকে শংসাপত্র জোগাড় করে তাঁরা ডায়ালিসিস করাতে আসতেন। অনেক সময়ই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন, সেই শংসাপত্র পাওয়ার যোগ্য নন রোগী। অথচ কিছু করার নেই। পরের দিকে আবার পাড়ার কোনও রাজনৈতিক নেতার কাছ থেকেও শংসাপত্র নিয়ে ডায়ালিসিস করাতে চলে এসেছেন কেউ কেউ। মানবিক কারণে তাঁদের ফেরাতে পারেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এর ফলে পরিষেবা দেওয়ার বিনিময়ে ঘরে অর্থ ঢোকার পরিমাণ তলানিতে ঠেকে।
ডায়ালিসিস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কিডনির রোগে ভোগা রোগীরা। আবার সাপে কাটা রোগীদেরও অনেক সময় ডায়ালিসিসের দরকার পড়ে। ফলে তাঁদের বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তরিত করতে হচ্ছে। কিন্তু দুর্গাপুর থেকে বর্ধমানে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া লাগে সে ক্ষেত্রে। তা ছাড়া সময়ও বেশি লাগে। ফলে অনেক সময়েই রোগীর স্বাস্থ্য সঙ্কটে পড়ছে বলেজানা গিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে হাসপাতাল সুপার দেবব্রত দাস বলেন, ‘‘সমস্যার কথা সংশ্লিষ্ট দফতরে জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশের অপেক্ষায় আছি। নির্দেশ মিললেই সেই মতো ফের চালু হবে ডায়ালিসিস ইউনিট।’’