প্রতীকী ছবি।
একশো দিনের প্রকল্পে মজুরি বাবদ পশ্চিম বর্ধমান জেলায় মোট প্রায় ২৪ কোটি টাকা পাঠানো বাকি কেন্দ্রীয় সরকারের— এমনটাই দাবি করেছে জেলা প্রশাসন। এই পরিস্থিতিতে কাজ করেও টাকা না পওয়ায় জব-কার্ডধারীদের একাংশ কাজ করতেও চাইছেন না বলে দাবি।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কাঁকসা, দুর্গাপুর-ফরিদপুর, অন্ডাল, রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া, পাণ্ডবেশ্বর, বারাবনি এবং সালানপুর— এই আটটি ব্লকেই একশো দিনের প্রকল্পের কাজ হয়। জেলা প্রশাসনের দাবি, গত প্রায় ছ’মাস ধরে কেন্দ্র মজুরির টাকা পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে। ২০২১-২০২২ অর্থবর্ষে ৭২ কোটি এবং ২০২২-২০২৩ অর্থবর্ষে, ২৭ জুন পর্যন্ত তিন কোটি টাকার কাজ হয়েছে জেলায়। এর মধ্যে প্রায় ২৪ কোটি টাকা কেন্দ্রের তরফে পাওয়া যায়নি বলে দাবি।
জেলা প্রশাসনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিকের দাবি, “প্রশাসনের তরফে একশো দিনের কাজ বন্ধ করা হয়নি। কিন্তু প্রায় ২৪ কোটি টাকা মজুরি বাবদ কেন্দ্রের থেকে বকেয়া রয়েছে। প্রায় ছ’মাস ধরে মজুরি পাননি জব-কার্ডধারীরা। তাই তাঁদের বড় অংশই এখন কাজ করতে চাইছেন না। ফলে, প্রকল্পগুলির কাজ প্রায় বন্ধ। এই অবস্থায়, বাগান, ইকো-পার্কের মতো স্থায়ী সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছে।”
জেলায় একশো দিনের প্রকল্পের নোডাল অফিসার রাজীব পাণ্ডের অভিযোগ, “কেন্দ্র টাকা পাঠাচ্ছে না এই প্রকল্পে।” এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার একটি কর্মপ্রকল্প চালু করেছে। ২০ মে, রাজ্য সরকার এই নতুন প্রকল্পে একটি পোর্টাল (wbdeptemployment.in) চালু করা হয়েছে বলে জানান তিনি। তাঁর দাবি, “রাজ্য জুড়ে জব-কার্ডধারীদের এই পোর্টালে নাম তুলতে হবে। তার ভিত্তিতে কাজ দেওয়া হবে। কৃষি, কৃষি বিপণন, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, জনস্বাস্থ্য কারিগরি, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ, কৃষি ও জল সেচ-সহ রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরে তাঁদের কাজদেওয়া হবে।”
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিম বর্ধমানে এক লক্ষ ৪৪ হাজার ৪৪৭ জন জব-কার্ডধারী রয়েছেন। ইতিমধ্যে তেমন ২০,৭৩৪ জনের নাম ওই পোর্টালে নথিভুক্ত করে তাঁদের কাজেও নিযুক্ত করা হয়েছে। এই জেলায় বারবানি ব্লকে সবথেকে বেশি ছ’হাজার জব-কার্ডধারীকে কাজ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার পরেও, এই পরিস্থিতিতে সামগ্রিক ভাবে সমস্যায় পড়েছেন জব-কার্ডধারীরা। রানিগঞ্জের আমরাসোঁতা পঞ্চায়েতের বাঁশড়ার মালতি টুডু, শর্মিলা হেমব্রম, জামুড়িয়ার চিচুড়িয়ার দীপক বাউরি, অসিত কোটালেরা বলেন, “ছ’মাস মজুরি বন্ধ। এখন দিনমজুরি করি।”
ঘটনাচক্রে, বিষয়টি নিয়ে তৃণমূল-বিজেপি তরজাও বেধেছে সাম্প্রতিক সময়ে। এর আগে, স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মজুরি বন্ধের বিষয়টি জানিয়ে গত মে এবং জুনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়েছিলেন। তৃণমূলের প্রতিনিধি দল কেন্দ্রের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহের কাছেও দরবার করেছিল। বিষয়টি নিয়ে বার বার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। নবান্নের হিসাব অনুযায়ী, এই মুহূর্তে এই প্রকল্পের ৭,১৩০ কোটি টাকা কেন্দ্রের কাছে বকেয়া রয়েছে। বিজেপি দাবি করেছিল, গত তিন বছর ধরে এই প্রকল্পের হিসাব রাজ্য দিতে না পারাতেই এই হাল।
বাদানুবাদের রেশ পৌঁছেছে জেলাতেও। বিজেপির আসানসোল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দিলীপ দে’র অভিযোগ, “একশো দিনের কাজে রাজ্যে চরম দুর্নীতি হয়েছে। তাই কেন্দ্রকে হিসাব দিতে পারছে না রাজ্য। সে জন্যই টাকা বন্ধ রয়েছে।” যদিও তৃণমূলের পশ্চিম বর্ধমান জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ ঘটকের দাবি, “ভিত্তিহীন অভিযোগ। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্যই কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না।”