মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের হাত থেকে তৃণমূলের পতাকা তুলে নেন পঙ্কজ রায় সরকার। —নিজস্ব চিত্র।
জল্পনাই সত্যি হল। বহিষ্কারের পরেই সিপিএমের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর প্রাক্তন সদস্য পঙ্কজ রায় সরকার যোগদান করলেন তৃণমূলে। রবিবার বিকেলে দুর্গাপুরে তৃণমূলের কার্যালয়ে ঘাসফুল আঁকা পতাকা হাতে তুলে নেন তিনি।
রবিবারই পঙ্কজকে বহিষ্কারের কথা ঘোষণা করে সিপিএম। একটি বিবৃতিতে সিপিএমের পশ্চিম বর্ধমান জেলা কমিটি জানায়, ক্রমাগত পার্টি লাইনের বিরোধিতা করা, সরাসরি তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ এবং দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অন্য দিকে, তৃণমূলে যোগদানের পর পঙ্কজ জানান, তিনি তিনটি কারণে সিপিএম ছেড়েছেন। বস্তুত, সিপিএম তাঁকে বহিষ্কার করার আগেই দল ছাড়ার ইচ্ছার কথা জানিয়ে নেতৃত্বকে চিঠি দেন তিনি। পঙ্কজের কথায়, ‘‘তিনটি কারণে আমি দলত্যাগ (সিপিএম) করলাম। প্রথমত, বামফ্রন্টের ভোট কেন বিজেপিতে যাবে? সেই ভোট কেন আটকানো সম্ভব হচ্ছে না? ২০১৪ সাল থেকে প্রত্যেক বারই দেখা যাচ্ছে যে, বামফ্রন্টের ভোট কমে যাচ্ছে। সেই ভোটটা চলে যাচ্ছে বিজেপিতে। আমার কথা কেউ শোনেনি। দ্বিতীয়ত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা এ রাজ্যের সরকার গরিবের কল্যাণের স্বার্থে যে প্রকল্পগুলি নিয়ে এসেছে, তা নিয়ে কটাক্ষ না-করে তার সমর্থন করে মানুষের স্বার্থে অন্য দাবি করা যেত। বলা যেতে পারত যে, এক হাজার টাকার বদলে বারোশো টাকা দিতে হবে বা ১৫০০ টাকা দিতে হবে লক্ষ্মীর ভান্ডারে, তা হলে সাধারণ মানুষই উপকৃত হতেন। সাধারণ মানুষ সিপিএমের থেকে অনেকটাই দূরে চলে গিয়েছে। বিশেষত, গরিব শ্রেণি। আর তৃতীয়ত, কংগ্রেস-আইএসএফের সঙ্গে জোট কোনও ভাবেই মেনে নেননি রাজ্যবাসী। কারণ, বামপন্থার সঙ্গে তাদের আদর্শ কোনও দিক দিয়ে কোনও ভাবে মেলে না। এই বিষয়েও আমি প্রতিবাদ করেছিলাম। কিন্তু আমি সমস্ত বৈঠকে সংখ্যালঘু হয়ে গিয়েছিলাম।’’
পঙ্কজের হাতে তৃণমূলের পতাকা তুলে দিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘সিপিএম দলে আর কিছু নেই। তাই ভাল মানুষ যাঁরা এখনও সিপিএম দলে রয়ে গিয়েছেন, তাঁরা তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করুন, এটাই আমাদের আবেদন।’’
পঙ্কজ এক সময় কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরি করতেন। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী নিরুপম সেনের স্নেহধন্য পঙ্কজ চাকরি ছেড়ে সিপিএমের হোলটাইমার হন। জেলা সিপিএমে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। বিশেষত, সাংগঠনিক ক্ষমতা ভাল। তৃণমূল সেটাকেই কাজে লাগাতে চায়। যদিও সিপিএম জানাচ্ছে, পঙ্কজের দলে থাকা বা না-থাকায় কোনও প্রভাব পড়বে না।