প্রতীকী ছবি।
পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের গত অর্থবর্ষের প্রথম দফার অর্ধেক টাকা এখনও খরচ করতে পারেনি পূর্ব বর্ধমানের পঞ্চায়েতগুলি। অর্ধেকের সামান্য বেশি টাকা খরচ করেছে পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ। এরই মধ্যে জেলায় ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের অ্যাকাউন্টে ওই অর্থবর্ষের (২০২০-২১) দ্বিতীয় দফার প্রায় ১৩৬ কোটি টাকা এসে পৌঁছেছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পড়ে থাকা টাকার কাজের পরিকল্পনা আগেই জমা পড়েছে। কিন্তু দরপত্র ডাকা বা অর্থ খরচের মতো নানা বিষয় বাকি আছে। সম্প্রতি পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিকে শীঘ্র দরপত্র ডেকে জেলার পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরে (ডিপিআরডিও) রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার দাবি, ‘‘চলতি অর্থবর্ষের (২০২১-২২) প্রথম দফার টাকা রাজ্যে চলে এসেছে বলে শুনেছি। সম্ভবত, গত আর্থিক বছরের প্রথম দফার ৬০ শতাংশও খরচ হয়নি বলে রাজ্য সে টাকা এখনও জেলায় পাঠায়নি।’’
পূর্ব বর্ধমান জেলায় ২১৫টি পঞ্চায়েত ও ২৩টি পঞ্চায়েত সমিতি রয়েছে। নতুন অর্থ কমিশনের নির্দেশিকা অনুযায়ী, নির্দিষ্ট পোর্টালের মাধ্যমে তহবিলের টাকা খরচ করতে হবে। প্রশাসন সূত্রের দাবি, সেখানেই বিপত্তি ঘটছে বলে মনে করা হচ্ছে। ‘ই-গ্রাম স্বরাজ’ নামে ওই পোর্টালে নানা বিধ ‘ই-সিগনেচার’ করাতে জেলা বা রাজ্য স্তরের অনুমোদনের প্রয়োজন। পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতির সে অনুমোদন পেতে সমস্যা হয়েছে। আবার অনেক সময়ে, প্রযুক্তিগত অসুবিধার জন্য পোর্টাল ব্যবহারে বিভ্রাট ঘটেছে বলে অভিযোগ। ফলে, অর্থ খরচে সমস্যা হয়েছে।
এর উপরে বিধানসভা ভোট থাকায় উন্নয়নের প্রকল্পে টাকা খরচ করতে পারেনি পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি বা জেলা পরিষদ। ফলে, ওই আর্থিক বছরের পুরো বরাদ্দ ব্যবহারের সুযোগ ছিল না বলে প্রশাসন ও ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের কর্তাদের অনেকের দাবি। কিন্তু পঞ্চায়েত স্তরে অর্ধেক টাকাও খরচ করা গেল না কেন? প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, ‘‘২৮টি পঞ্চায়েত কোনও টাকা খরচ করতে পারেনি। সে জন্যই জেলার সামগ্রিক খরচের পরিমাণ ৫০ শতাংশেরও কম দেখাচ্ছে।’’
শুধু পঞ্চায়েত নয়, খরচের দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে পঞ্চায়েত সমিতিগুলিও। গত অর্থবর্ষে পঞ্চায়েত সমিতিগুলি প্রাপ্ত অর্থের ৫৫ শতাংশ টাকা খরচ করতে পেরেছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। মে মাসের শেষ দিকে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্ধমান ১, কালনা ১, মেমারি ১ ও ২, পূর্বস্থলী ১ ও রায়না ১ পঞ্চায়েত সমিতিতে মোটা টাকা পড়ে রয়েছে। ওই সব পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাহী আধিকারিক বা বিডিওদের দাবি, অনেক ক্ষেত্রে পরিকল্পনার পরে, দরপত্র ডেকে কাজ শুরু হয়েছে। অথবা, দরপত্র ডাকা হয়েছে। আবার, কাজ শেষ হয়ে গেলেও এখনও খরচ মেটানো হয়নি বলে তহবিলে অর্থ পড়ে রয়েছে দেখাচ্ছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদকে পরিকল্পনা খাতে ৬০ শতাংশ অর্থ খরচ করতেই হবে। ওই খাতে পঞ্চায়েতকে ৫০ শতাংশ অর্থ খরচ করলেই চলবে। পরিকল্পনা খাতে জনস্বাস্থ্য, জল, ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দিতে বলা হয়েছে। ২১৫টি পঞ্চায়েতের জন্য প্রায় ৯৫ কোটি, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের জন্য প্রায় ২০.৫২ কোটি টাকা করে এসেছে। ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যার নিরিখে পঞ্চায়েতগুলিকে টাকা ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের তরফে খরচের উপরে নজরদারি বাড়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।