নানা সরকারি প্রকল্পের মাস্টার রোলে অন্য কারও নাম থাকলেও অ্যাকাউন্ট নম্বরের জায়গায় নিজের বা পরিবারের কারও নম্বর দিতেন তিনি। টাকা এলেই তা তুলে নিতেন। অভিযোগ, এ ভাবেই প্রায় দু’কোটি টাকা তছরূপ করেছিলেন পঞ্চায়েতের ডেটা এন্ট্রি অপারেটর। জালিয়াতি সামনে আসার পাঁচ মাস পরে, বৃহস্পতিবার আদালতে আত্মসমর্পণ করলেন ওই কর্মী সুকান্ত পাল।
মাসে সাড়ে সাত হাজার টাকা বেতনে কাজ করতেন জামালপুরের কাঁশরা গ্রামের বাসিন্দা সুকান্ত ওরফে ফুলকুমার। যদিও সাম্প্রতিক কালে পুরনো বাড়ি ভেঙে পেল্লাই বাড়ি, গ্যারাজে দুটি গাড়ি দেখা যায় তাঁর। বর্ধমানের একটি গয়নার দোকান থেকে এক দিনে ৩৬ লক্ষ টাকার সোনা কেনা হয়েছে, বলেও জানতে পারেন তদন্তকারীরা। তার পরেই সন্দেহ বাড়ে। ২০০৭ সাল থেকে জামালপুর ২ পঞ্চায়েতে চুক্তিভিত্তিক কর্মী হিসেবে কাজ করতেন তিনি। পরে কয়েক মাসের জন্য বদলি হন আঝাপুর পঞ্চায়েতে। সেখান থেকে যান বেরুগ্রামে। সেখানে থাকাকালীনই নজরে আসে তাঁর ‘কীর্তি’।
এ বছরের গোড়ায় জামালপুর ২ পঞ্চায়েতে অডিটের পরে সরকারি আধিকারিকরা দু’দফায় চিঠি দিয়ে জানান, ১০০ দিনের কাজে কেঁচো তৈরির প্রকল্পে ২৬ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ও ইন্দিরা আবাস যোজনার মজুরি বাবদ ১১ লক্ষ ৬১ হাজার টাকা অতিরিক্ত তোলা হয়েছে। জামালপুর ব্লক ও পঞ্চায়েত যৌথ তদন্তে নেমে জানতে পারে, ওই দুই কর্মসূচি ছাড়াও গাছ লাগানো, নির্মল বাংলা প্রকল্পেও টাকার গরমিল করেছেন সুকান্ত। আঝাপুর পঞ্চায়েতেও ধরা পড়ে আর্থিক অনিয়ম। ২১ জানুয়ারি থেকে বেপাত্তা হয়ে যান ওই কর্মী। পরে জামালপুর ২ নম্বর পঞ্চায়েতের এগজিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায় গত ৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। আঝাপুর পঞ্চায়েতের প্রধান অশোক ঘোষও ওই সময়েই তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর করেন।
এ দিন অভিযুক্ত সুকান্ত স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বর্ধমান আদালতে হাজির হন। তবে তছরূপের অভিযোগ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি তিনি। অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, সুকান্তবাবুকে ফাঁসানো হয়েছে দাবি করে জামিনের আবেদন করেন। সওয়াল শুনে ওই কর্মীকে ৬ অগস্ট পর্যন্ত বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠান ভারপ্রাপ্ত সিজেএম সোমনাথ দাস।