রবিবার রাতে পানাগড়ে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান ২৭ বছরের সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
পানাগড়কাণ্ডে ‘ইভটিজ়িংয়ের’ অভিযোগ আগেই অস্বীকার করেছিল পুলিশ। এ-ও জানিয়েছিল, দুর্ঘটনার কারণ গাড়ি নিয়ে রেষারেষি! নিজেদের দাবির সপক্ষে কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজও প্রকাশ করে তারা। কিন্তু তা সত্ত্বেও স্পষ্ট হচ্ছিল না, সেই রাতে ঠিক কী ঘটেছিল। কারা কাদের গাড়ি ধাওয়া করেছিলেন? পুলিশ সূত্র মারফত সেই প্রশ্নেরই উত্তর জানার চেষ্টা করল আনন্দবাজার অনলাইন।
গত রবিবার রাতে পানাগড়ে গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রাণ গিয়েছে চন্দননগরের বাসিন্দা, একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার কর্ণধার সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়ের (২৭) । প্রাথমিক ভাবে অভিযোগ ওঠে, কয়েক জন মত্ত যুবক একটি সাদা গাড়িতে করে এসে সুতন্দ্রাদের নীল গাড়িটিকে বার বার ধাক্কা দেন। তার ফলেই উল্টে যায় সুতন্দ্রাদের গাড়ি। ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় তরুণীর। এই দাবি করেছিলেন ঘটনার সময় সুতন্দ্রার গাড়িতে থাকা সহকর্মীরা।
যদিও পরে সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ্যে এনে পুলিশ দাবি করে, রেষারেষির কারণেই গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটেছিল পানাগড়ে। সুতন্দ্রাদের গাড়িটিকে বার বার ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগ কার্যত উড়িয়ে দিয়ে পুলিশের দাবি ছিল, তরুণীর গাড়িই যুবকদের সাদা গাড়িটিকে তাড়া করছিল ওই রাতে। কয়েকটি সিসি ফুটেজেও সুতন্দ্রার গাড়িটিকে যুবকদের গাড়ির পিছনে পিছনে যেতে দেখা গিয়েছে। সেই সময় সুতন্দ্রার গাড়ির গতিও বেশি ছিল। কিন্তু সেই সময় এর চেয়ে বেশি তথ্য মেলেনি।
এ বার পুলিশ সূত্রে জানা গেল, রবিবার রাতে পানাগড়ে পুরনো জিটি রোডে ঠিক কী ঘটেছিল। তদন্তকারীদের একটি সূত্র জানিয়েছে, চন্দননগর থেকে আসানসোলের দিকে যাওয়ার পথে বুদবুদ থানা এলাকায় পেট্রল পাম্পে দাঁড়িয়েছিল সুতন্দ্রাদের গাড়িটি। সেখান থেকে পেট্রল ভরার পর তাঁরা পানাগড়ের দিকে যাচ্ছিলেন। সেই সময় তাঁদের সামনেই ছিল সাদা গাড়িটি। পানাগড়ে ঢোকার মুখে সাদা গাড়িটি বাঁ দিকের ইন্ডিকেটর দিয়ে জানান দিয়েছিল, তারা জিটি রোডের রাস্তায় উঠবে। সেই সময়েই সাদা গাড়িটিকে ওভারটেক করার চেষ্টা করেছিল তরুণীর গাড়ি। ওভারটেক করতে গিয়েই দু’টি গাড়ির মধ্যে ঘষা লাগে। ডিভাইডারে গিয়ে ধাক্কা মারে তরুণীর গাড়ির একটি চাকা। এর পর যুবকদের গাড়িটিকে সোজা এগিয়ে যেতে দেখেই তাদের ধাওয়া করে তরুণীর গাড়িটি।
পুলিশ যে সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ্যে এনেছিল, তাতে সেই রকমই দৃশ্য দেখা গিয়েছিল। পুলিশের ওই সূত্র জানিয়েছে, ধাওয়া করতে করতে তরুণীর গাড়িটি সাদা গাড়িটিকে এক বার ওভারটেক করেওছিল। ওভারটেক করে গাড়িটি দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল তারা। চেষ্টা করেছিল সাদা গাড়িটিকেও দাঁড় করাতে। কিন্তু সাদা গাড়িটি দাঁড়ায়নি। পাশ কাটিয়ে সোজা নিজেদের গন্তব্যের দিকে রওনা দেয়। তা দেখে আবার সাদা গাড়িটিকে তরুণীর গাড়িটি ধাওয়া করা শুরু করে। সেই সময়েই একটি শৌচাগারে গিয়ে ধাক্কা দেয় তরুণীর নীল গাড়িটি। এতে যুবকদের সাদা গাড়িটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গাড়িটি আটকেও যায়। ওই ঘটনার পরেই সেখান থেকে চম্পট দেন সাদা গাড়িতে থাকা পাঁচ যুবক।
তদন্তকারীদের সূত্র জানিয়েছে, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তরুণীর দেহ হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। তরুণীর সঙ্গে গাড়িতে থাকা চার জনকে (চালক-সহ) থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ সূত্রের দাবি, থানা থেকে সুতন্দ্রার দুই সহকর্মীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বাকি দু’জন থানাতেই ছিলেন। কিন্তু ওই রাতে তাঁরা কোনও অভিযোগ জানাননি। পর দিন সকালে তাঁরা দাবি করেন, কয়েক জন মত্ত যুবকের দৌরাত্ম্যেই তাঁদের গাড়ি উল্টে গিয়ে তরুণীর মৃত্যু হয়েছে। তদন্তকারীদের ওই সূত্রের দাবি, সিসিটিভি ফুটেজ হাতে পাওয়ার পর তরুণীর চার সঙ্গীকে আবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেই সময় তাঁরা ওই রাতের ঘটনার কথা বিস্তারিত জানান। প্রসঙ্গত, ওই চার জন বুধবার দুর্গাপুর আদালতে গোপন জবানবন্দিও দিয়েছেন।
আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের ডিসিপি অভিষেক গুপ্ত বলেন, ‘‘আমাদের তদন্ত শেষের পথে। খুব তাড়াতাড়িই পুরো বিষয়টা সংবাদমাধ্যমকে জানানো হবে।’’