ব্লক অফিসে বিক্ষোভে চাষিরা। নিজস্ব চিত্র।
দিন কয়েক আগেই কলকাতার মহাজাতি সদনে মন্ত্রীদের সামনেই বকেয়া টাকা না পাওয়ার অভিযোগ করেছিলেন রাজ্যের বিভিন্ন সমবায় সমিতির প্রতিনিধিরা। এ বার সমবায় সমিতিতে ধান বিক্রির পরে প্রায় এক বছর কেটে গেলেও টাকা না মেলার অভিযোগ করলেন আউশগ্রামের চাষিরা। প্রতিবাদে শুক্রবার আউশগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা অবরোধ, ব্লক অফিসে তালাও ঝোলান চাষিদের একাংশ।
আউশগ্রামের চাষি আশিস ঘোষ, গদাধর মিশ্ররা জানান, গত বছর জানুয়ারিতে তাঁরা অমরারগড়, জামতাড়া, বাবুইশোলের তিনটি সমবায় সমিতিতে সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি করেন। কিন্তু তার টাকা এখনও মেলেনি। চাষিদের অভিযোগ, কয়েক হাজার চাষির বকেয়ার পরিমাণ প্রায় চার কোটি টাকা। এ দিন সকাল থেকেই বকেয়া টাকার দাবিতে চাষিরা গুসকরা-দুর্গাপুর মেন রোড অবরোধ করেন। আউশগ্রাম ২ ব্লক অফিসেও তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এর জেরে এলাকায় ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। আটকে পড়েন নিত্যযাত্রীরা। অফিসে ঢুকতে পারেননি আউশগ্রাম ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সৈয়দ হায়দার আলি-সহ অন্যান্য কর্মীরা। এর আগেও একই দাবিতে অবরোধ করেছিলেন চাষিরা।
অমরারগড় গ্রামের চাষি অশোক পালের অভিযোগ, ‘‘স্ত্রীকে নিয়ে ভিন্ রাজ্যে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাওয়ার কথা। টাকা না মেলায় তা আটকে গিয়েছে।’’ ভাল্কি গ্রামের ক্ষেতু সেনের দাবি, ‘‘৫ ফেব্রুয়ারি মেয়ের বিয়ে। এখনও ধান বিক্রির টাকা না পেয়ে বিয়ের কেনাকাটা করতে পারিনি।’’ এ দিকে, পথ অবরোধের খবর পেয়ে ব্লক অফিসে আসেন বর্ধমান সদরের (উত্তর) মহকুমাশাসক মুফতি শামিম সওকত, ভাতারের বিধায়ক সুভাষ মণ্ডলেরা। ব্লক প্রশাসন ও সভাপতির সাথে বৈঠক করেন। শেষে মহকুমাশাসক আশ্বাস দেন, আগামী বুধবারের মধ্যে বকেয়া মিটিয়ে দেওয়া হবে। এর পরেই অবরোধ ওঠে। আউশগ্রাম ২-এর বিডিও দীপ্তিময় দাসের অবশ্য দাবি, ‘‘চাষিদের বকেয়া মেটানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বুধবারের মধ্যে গোটা প্রক্রিয়া শেষ হবে।’’ চাষিরা বকেয়া পাননি কেন? অমরারগড় সমবায় সমিতির সমম্পাদক দীনপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘স্থানীয় চালকল চাল দিতে দেরি করায় শেষ দু’দফার বিল পাঠাতে দেরি হয়েছে। চলতি বছরে সমবায় সমিতিতে ধান বিক্রি করতে চাইছেন না চাষিরা।’’
ফসলের দাম নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে গলসিতেও। এ দিন বুদবুদে ঝঙ্কার পরিচালিত কৃষি ও স্বাস্থ্য মেলায় মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ আসছেন শুনে চাষিদের অনেকের মনে আশা জেগেছিল মন্ত্রী হয়তো এ নিয়ে কিছু বলবেন। দিনের শেষে মন্ত্রী এ নিয়ে মুখ না খোলায় হতাশ হয়েই ঘরে ফিরেছেন চাষিরা। পারাজের আলি আহমেদ, কোলকোলের বিশ্বজিৎ মল্লিক, পুরসার জনাবুদ্দিনদের ক্ষোভ, আসল কথার সদুত্তর না দিয়ে মন্ত্রী শুধুই সরকারের গুণগান গেয়ে গেলেন!