হরিহরপাড়ার নির্মীয়মাণ বাড়িতে চলছে তল্লাশি। নিজস্ব চিত্র।
তিন নয়, বোমা বাঁধার সময় ওই ঘরে ছিলেন চার জন। চতুর্থ জন খোদ বাড়ির মালিক বাবু মণ্ডল।
বুধবার কালনার কৃষ্ণদেবপুরের হরিহরপাড়ায় নির্মীয়মাণ বাড়িতে বিস্ফোরণে জখম তিন জনকে পাওয়া গিয়েছিল। বৃহস্পতিবার জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, বিস্ফোরণের পরেই পালিয়ে যান বাবু। কিছুটা আঘাতও লেগেছে তাঁর। এ দিন ঘটনাস্থলে যায় বম্ব স্কোয়াড। তদন্তে নামে সিআইডিও। বাবু ঘনিষ্ঠ রবিউল আলম ও চঞ্চল বিশ্বাস নামে দু’জনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, হরিহরপা়ড়ায় পৈত্রিক বাড়ির কাছেই পুকুর পাড়ে গত বছর খানেক ধরে বাড়ি তৈরি করছেন বাবু। তারই একটি ঘরে বোমা বাঁধা চলছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের যদিও দাবি, দুষ্কর্মের কথা টের পাননি তাঁরা। তবে বাবুর গতিবিধি নিয়ে অনেকেরই সন্দেহ ছিল। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নকশাল নেতা হিসেবে রাজনীতিতে বেশির ভাগ সময় কাটান বাবু মণ্ডল। তবে ১৯৯৪ সালের ২৭ মার্চ কালনা মহকুমা হাসপাতালে তৎকালীন নকশাল নেতা আব্দুল হালিম শেখ খুনের পরে মহাদেব মুখোপাধ্যায় গোষ্ঠী থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। এর পরে কখনও আত্মগোপন, কখনো বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হয়ে তাঁকে দেখা যায়। বছর আড়াই আগে তৃণমুলে যোগ দেওয়ার আগে তিনি নিজেই একটি নকশালপন্থী ভাবধারায় কৃষক ও শ্রমিক সংগঠন তৈরির চেষ্টা করেন। কিন্তু সংগঠনটি দাঁড়ায়নি। পুলিশের দাবি, এলাকার বেশ কিছু তৃণমূল কর্মী ও এক দোকান মালিককে জিজ্ঞেস করে জানা গিয়েছে, আটের দশক থেকে প্রায় দেড় দশক ধরে নকশাল নেতা থাকাকালীন বহু অপরাধে অভিযুক্ত ছিলেন বাবু। পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চির পেটানো চেহারার বাবু বোমা বাঁধাতেও দড়। এক বার বোমার আঘাতে জখমও হয়েছিলেন তিনি। তৃণমূলে যোগ দিলেও নির্দিষ্ট কিছু নেতার ডেরাতেই তাঁর যাতায়াত ছিল বলে জানা গিয়েছে। যদিও তৃণমূল নেতারা বাবুর সঙ্গে দলের সমস্ত যোগ অস্বীকার করেছেন।
বুধবার রাত থেকে কালনার বেশ কিছু জায়গা ছাড়াও চুঁচুড়া, সোমরাবাজারে বাবুর খোঁজ চালায় পুলিশ। মোবাইল টাওয়ার ধরেও খোঁজ চলে। তবে বারবার একই জায়গা দেখানোয় পুলিশের সন্দেহ হয়, মোবাইল ফেলে অন্যত্র পালিয়েছেন তিনি। এলাকায় জিজ্ঞাসাবাদ করে বাবু ঘনিষ্ঠ, কালনার একটি নার্সিংহোমের মালিক রবিউল আলমকে ধরে পুলিশ। তৃণমূলের সংখ্যালঘু নেতা হিসেবে এলাকায় পরিচিত তিনি। অন্য ধৃত চঞ্চল বিশ্বাসের বাড়িতে আবার ভাড়া নিয়ে থাকতেন বাবু। তাঁদের থেকে আরও তথ্য জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। খোঁজখবর করছে সিআইডিও। কালনার এসডিপিও প্রিয়ব্রত রায় বলেন, ‘‘আহত তিন জন কথা বলার অবস্থায় নেই। বাবুর খোঁজ চলছে।’’ ধৃত দু’জনের পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজত হয় এ দিন।
এ দিন কলকাতা থেকে বম্ব স্কোয়াডের চার জনের একটি দল ঘটনাস্থলে আসে। তবে ওই নির্মীয়মাণ বাড়ি থেকে আরও কোনও বোমা মেলেনি। ঘণ্টা দুয়েক তল্লাশির পরে বেশ কিছু জিনিসের নমুনা নিয়ে যায় ওই দলটি। সিআইডি সূত্রের খবর, শক্তিশালী বিস্ফোরক দিয়ে বোমা বানানো হচ্ছিল। ঘরে একাধিক জানালা থাকায় বিস্ফোরণের তীব্রতা বোঝা যায়নি বলেও তাদের দাবি।