মিছিলে বাইরের লোক, ক্ষোভ

আগের দিন বড় মিছিল করেছিল সিপিএম। কিন্তু ধারে-ভারে তারা যে কোনও অংশে কম নন, তা বোঝাতে শহর জোড়া মিছিল করল তৃণমূলও। বুধবার বর্ণাঢ্য, দীর্ঘ এই মিছিলে প্রায় ১৫ হাজার লোক জড়ো হয়েছিলেন বলে শহর তৃণমূল নেতাদের দাবি। মিছিলের জেরে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল শহরও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কালনা শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৪৮
Share:

মিছিলের এক জায়গায় চলছে বাউল গান। —নিজস্ব চিত্র।

আগের দিন বড় মিছিল করেছিল সিপিএম। কিন্তু ধারে-ভারে তারা যে কোনও অংশে কম নন, তা বোঝাতে শহর জোড়া মিছিল করল তৃণমূলও। বুধবার বর্ণাঢ্য, দীর্ঘ এই মিছিলে প্রায় ১৫ হাজার লোক জড়ো হয়েছিলেন বলে শহর তৃণমূল নেতাদের দাবি। মিছিলের জেরে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল শহরও।

Advertisement

বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ কালনা ১, ২, মন্তেশ্বর এবং পূর্বস্থলী ব্লক থেকে বাস, ট্রাক্টরে হাজারো লোক ঢুকতে থাকে শহরে। অঘোরনাথ পার্ক স্টেডিয়ামে জড়ো হন তাঁরা। শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকেও মিছিল করে গিয়ে নেতা-কর্মীরা জড়ো হন ওই মাঠে। ১৮টি ওয়ার্ডের মিছিলকে আলাদা লাইনে ভাগ করে সোয়া ৫টা নাগাদ শুরু হয় মিছিল। মিছিলের কোথাও একতারা নিয়ে গান গাইছিলেন বাউলেরা, কোথাও আবার ধামসা, মাদলের তালে কোমর দোলাচ্ছিলেন আদিবাসী মহিলারা। সবশেষে ছিল টোটো ও অটোর সারি। শহরের বাসিন্দাদের দাবি, প্রচারের শেষ পর্বে এমন মিছিলে প্রার্থীদের দেখা তো হলই, সঙ্গে বিনোদনও হয়ে গেল।

তবে দলের কর্মী-সমর্থকেরা এই মিছিলের কৃতিত্ব পুরোটাই দিচ্ছেন জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী স্বপন দেবনাথকে। তাঁরাই জানাচ্ছেন, এর আগে কালনা শহর নিয়ে খুব একটা আগ্রহ না দেখালেও এ বারের পুরভোটে গোড়া থেকেই সক্রিয় ছিলেন তিনি। নির্বাচনের মাস তিনেক আগে থেকেই নানা গোষ্ঠীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় বসে তাদের একত্র করেন তিনি। প্রার্তী তালিকাতেও তাঁর প্রভাব দেখা যায়। দলীয় সূত্রের দাবি, স্বপনবাবুর নির্দেশেই চার পুর এলাকায় নিযুক্ত হন পাঁচ পর্যবেক্ষক। কালনা পুরসভায় এই দায়িত্ব পান জেলা সভাপতি দেবু টুডু ও কালনা ২ ব্লকের দলীয় সভাপতি প্রণব রায়। প্রাথমিক ভাবে তাঁরাই সংগঠনকে মজবুত করার কাজ করছিলেন। জানা গিয়েছে, দিন চারেক আগেও স্বপনবাবু বেশি সময় দিচ্ছিলেন দাঁইহাটে। কিন্তু সম্প্রতি কালনা শহরের একটি জনসভায় দলের লোকজনের সংখ্যা কম দেখে ক্ষুব্ধ হন তিনি। শহরের নেতাদের সে কথা জানানও। এরপরেই শহরে দলের ক্ষমতা দেখানোর ভার নিজের হাতে নেন স্বপনবাবু। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরই নয়, বুধবারের মিছিলকে সফল করতে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই ব্লক ও গ্রামের নেতাদের ফোন করে লোক আনার নির্দেশ দেন স্বপনবাবু। এমনকী মিছিল শুরুর আগে কোন ওয়ার্ড থেকে কত লোক এসেছে তা গোনার কথাও বলেন। স্বপনবাবুর বক্তব্য, ‘‘মানুষ আমাদের পাশে রয়েছে তা জানাতেই এই মিছিল।’’

Advertisement

কিন্তু গ্রামের লোকজনদের প্রাধান্য থাকা মিছিলে পুর এলাকার বাসিন্দাদের কতটা আত্মবিশ্বাস বাড়াবে? স্বপনবাবুর দাবি, শুধু গ্রাম নয় শহরের প্রতিটি ওয়ার্ড থেকেও বহু লোক এসেছিলেন। তবে শাসকদলের এই মিছিলে গ্রামের লোকজনেদের একাধিপত্তে শহরের কিছু নেতা-কর্মী বেশ ক্ষুব্ধ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতার কথায়, ‘‘বড্ড বেশি গ্রামের মানুষকে শহরে তুলে এনে কর্তৃত্ব দেখানো হচ্ছে। তাতে শহরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত অনেকেই প্রাপ্য সম্মান পাচ্ছেন না। এতে চটজলদি কিছু ভাল হলেও ভবিষ্যৎ ভাল হবে না।’’ এ দিন শহরের বেশ কিছু নেতাকে মিছিলের পিছনের সারিতে হাঁটতেও দেখা যায়।

যদিও তৃণমুলের এই মিছিল ফায়দা হবে না বলেই দাবি শহর সিপিএমের। দলের কালনা জোনাল কমিটির সদস্য স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মঙ্গলবার আমরা যে মিছিল করেছিলাম তাতে শহরের বাইরে কালনা থানা এলাকা থেকে লোকজন এসেছিলেন। তৃণমূল মহকুমার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোক এনেছে। আমরাও যদি আরও বড় এলাকা থেকে লোক আনতাম তাহলে মিছিল আরও বড় হত।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement