ছ’মাস ধরে বন্ধ এই লিফট। —নিজস্ব চিত্র।
বার বার সারাই করেও লাভ হয়নি। শেষমেশ লিফট বন্ধ করে দিয়েছেন দুর্গাপুরের ইএসআই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এর জেরে বিপাকে পড়েছেন রোগীরা। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, লিফটের বিকল্প হিসাবে র্যাম্প রয়েছে। কাজেই রোগীদের অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
২০০০ সালে দুর্গাপুরের বিধাননগরে চালু হওয়া এই হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা ১৫০। এর মধ্যে পুরুষদের জন্য ৭৯ ও মহিলা রোগীর জন্য বরাদ্দ ৭১ টি শয্যা। নয়ের দশকের মাঝামাঝি বাম সরকারের নতুন শিল্পনীতির হাত ধরে দুর্গাপুরে বহু বেসরকারি ইস্পাত ও ইস্পাত অনুসারী শিল্প গড়ে উঠতে থাকে। বাড়তে থাকে শিল্প-কারখানায় দুর্ঘটনার সংখ্যাও। জখম বা অসুস্থ শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে তাঁদের সাধারণ হাসপাতালের চেয়ে অতিরিক্ত সুবিধা দিতে দুর্গাপুরে ইএসআই হাসপাতাল চালু করে রাজ্য সরকারের শ্রম দফতর। পরের দিকে দুর্গাপুরে বিভিন্ন সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল গড়ে ওঠে। ইএসআই হাসপাতালে আসা রোগীদের প্রয়োজন হলে এই সব সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ‘রেফার’ করার ব্যবস্থাও রয়েছে।
হাসপাতালের ভবনটি দোতলা। তবে রোগীদের সুবিধার কথা ভেবে হাসপাতালে লিফট বসানো হয়। ফলে কোনও ভাবেই রোগীদের সিঁড়ি ভাঙার দরকার পড়ে না। সহজেই দোতলায় ওঠা যায়। অন্য দিকে একটি র্যাম্প রয়েছে ঠিকই। তবে র্যাম্প দিয়ে উঠতেও বেশ খানিক পরিশ্রম হয়। ফলে সব ধরনের রোগী বা তাঁদের পরিজনদের পক্ষে সেটা ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাওয়ার সময়েও যত সহজে লিফটে করে দোতলায় তোলা যায়, র্যাম্পের ক্ষেত্রে তা হয় না।
এ ছাড়া হাসপাতালের কর্মীরা প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করেন না বলেও রোগীদের অভিযোগ। এমনকি সুযোগ বুঝে সহযোগিতার জন্য টাকা চাওয়া হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে। যদিও কর্মীরা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এখানে মেডিসিন, জেনারেল সার্জারি, অর্থোপেডিকস, ইএনটি, গাইনোকলোজি, ডেন্টাল ও শিশুদের ইমিউনাইজেশন বিভাগ রয়েছে। মোট শয্যাসংখ্যার প্রায় অর্ধেক রয়েছে দোতলায়। সার্জারি, গাইনোকোলজি, বার্ন ইউনিট প্রভৃতি বিভাগ রয়েছে দোতলায়। অপারেশন থিয়েটারও দোতলায়। কিন্তু গত প্রায় ছ’মাস ধরে লিফট বিকল থাকায় দোতলার রোগী ও রোগীর পরিজনদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগীর আত্মীয় বলেন, ‘‘দোতলায় রোগীকে তুলতে হাসপাতাল কর্মীদের সাহায্য নিতে হয়। নিমরাজি হয়ে কেউ হয়তো এগিয়ে আসেন। কেউ আসতে চান না। লিফট চালু থাকলে রোগীকে আমরা নিজেরাই দোতলায় তুলে নিতে পারি।’’
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, লিফটি পুরনো। সারাই করার কিছু দিনের মধ্যেই ফের বিকল হয়ে যায়। বার বার চেষ্টা করেও বিপত্তি না মেটায় লিফটটি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে এখন হাসপাতালের তৃতীয় তলা নির্মাণের কাজ চলছে। সেই কাজ শেষ হলে এখনকার বিকল লিফটির চেয়ে আকারে বড় লিফট লাগানোর ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের সুপার শোভন পান্ডা। তিনি বলেন, ‘‘দোতলা হাসপাতাল ভবনে লিফট না থাকলেও চলে। তবে র্যাম্প থাকা বাধ্যতামূলক। আমাদের হাসপাতালে র্যাম্প চালু রয়েছে। ভবিষ্যতে নতুন লিফট বসানোর পরিকল্পনাও রয়েছে।’’