অনুব্রত মণ্ডল। —ফাইল চিত্র।
অনুব্রত মণ্ডল জেলবন্দি থাকার প্রভাব মনোনয়নে প্রতিফলিত হচ্ছে, দাবি করছে বিরোধীদের অনেকেই। অনুব্রত ওরফে কেষ্ট পূর্ব বর্ধমানের যে তিন এলাকায় দলের দায়িত্বে ছিলেন, সেই মঙ্গলকোট, কেতুগ্রাম ও আউশগ্রামে গত পঞ্চায়েত ভোটে বিরোধীরা মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি। এ বার কিছু ক্ষেত্রে বাধা এলেও, অনেক আসনে মনোনয়ন জমা দিতে পারা থেকে ইঙ্গিত মিলছে, ভোট ‘অন্য রকম’ হবে, দাবি বিরোধীদের অনেকের।
সিপিএমের গুসকরা পূর্ব এরিয়া কমিটির সম্পাদক রবিন টুডু দাবি করেন, ‘‘অনুব্রত গ্রেফতার হওয়ার পরে তৃণমূলের একাংশ দলের প্রতি আস্থা হারিয়ে বসে গিয়েছে। আগের বারে পঞ্চায়েত ভোটে আউশগ্রামে কোনও সিপিএম প্রার্থী ছিল না। এ বার বেশ কয়েক জায়গায় সিপিএম মনোনয়ন জমা দিয়েছে।’’ তাঁর আরও দাবি, অনুব্রত গরু পাচার মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পরে তৃণমূলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সে কারণে তৃণমূল এলাকায় কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, অনুব্রতের ‘চাপে’ পুলিশ-প্রশাসনের একাংশও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতেন না বলে সিপিএমের দাবি।
বিজেপি অবশ্য আশঙ্কা করছে, অনুব্রতের অনুপস্থিতিতেও সন্ত্রাসের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। দলের বর্ধমান সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অভিজিৎ তায়ের দাবি, ‘‘অনুব্রত মণ্ডল সন্ত্রাসের প্রতিমূর্তি হয়ে উঠেছিলেন। তিনি সন্ত্রাসের যে অপসংস্কৃতি তৈরি করেছিলেন, এক বারে সেটা দূর করা যাবে না। তাঁর যে সমস্ত অনুগামীরা রয়েছেন, তাঁরাও এখন একই কায়দায় ভোট করানোর চেষ্টা করবেন।’’
কেতুগ্রামের কান্দরায় মনোনয়ন দিতে যাওয়ার পথে সিপিএম নেতা-কর্মীদের উপরে হামলার অভিযোগ উঠেছিল। তবে তার পরে কেতুগ্রাম, মঙ্গলকোটে বিরোধীরা বেশ কিছু মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। মঙ্গলকোটের গোতিষ্ঠা, কেতুগ্রামের কান্দরায় নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক দুই তৃণমূল কর্মীর দাবি, ‘‘বাম জমানায় আমরা আক্রান্ত হলে কেষ্টদা পাশে এসে দাঁড়াতেন। পাল্টা কী ভাবে মোকাবিলা করা যায়, পরামর্শ দিতেন। তা ভুলি কী করে? কেষ্টদার ‘মডেল’ এখনও প্রয়োজন।’’
অনুব্রতের জন্য দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা মানতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব। কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজের কথায়, “রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় বিজেপি কেষ্টদা এবং তাঁর মেয়েকে জেলে আটকে রেখেছে। মানুষ এটা মেনে নেবেন না।’’ পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়েরও বক্তব্য, ‘‘বিরোধীরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অনুব্রতকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘অনুব্রতের অনুপস্থিতিতে সাংগঠনিক ভাবে আমাদের সমস্যা হচ্ছে, তা নয়।তবে তাঁর অবদান তো অস্বীকার করা যাবে না।’’