মাঝে বছর সাড়ে তিনের বিরতি। তার পরে আবার একই কায়দায় পরপর হামলা। গলায় চেন পেঁচিয়ে খুনের চেষ্টার একের পর এক ঘটনায় আতঙ্ক ফিরে এসেছে কালনা মহকুমা এলাকায়। কে কী কারণে এমন হামলা চালাচ্ছে, পুলিশের কাছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে তদন্তকারীদের দাবি, কাউকে ধরা না গেলেও বেশ কিছু তথ্য হাতে এসেছে।
এই এলাকায় এমন ধরনের অপরাধ শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালে। সে বছর মহকুমার তিন জায়গায় তিন জন মহিলা আক্রান্ত হন। দু’জনের মৃত্যু হয়। আনুখালের কদম্বা গ্রামে এক মহিলার প্রতিরোধের মুখে পড়ে পালায় আততায়ী। তিনটি ক্ষেত্রেই চেন ফেলে রেখে যায় দুষ্কৃতী। কদম্বার মহিলার কাছে বিবরণ শুনে তার একটি স্কেচ আঁকে পুলিশ। তদন্তে নামে সিআইডি। তদন্তকারীদের অনুমান, প্রতিটি ঘটনার পিছনে রয়েছে এক জনই। তবে তার হদিস মেলেনি।
এর পরে বেশ কিছু দিন নতুন কোনও হামলা না হলেও ২০১৯-এর গোড়াতেই ফের একই দুষ্কর্ম শুরু হয়েছে। ২৭ জানুয়ারি আনুখালে বছর আটচল্লিশের এক মহিলা এবং ১ ফেব্রুয়ারি সুলতানপুরের উপলতি গ্রামের এক বৃদ্ধার উপরে হামলা হয়। আনুখালে মৃত্যু হয় মহিলার। উপলতিতে বৃদ্ধার ছেলে সেই সময়েই বাড়ি ফিরে আসায় পালিয়ে যায় আততায়ী। এই দু’টি ক্ষেত্রেও ঘটনাস্থলে মিলেছে চেন।
সাড়ে তিন বছর আগের ঘটনাগুলির সঙ্গে এই দুই ঘটনার বেশ কিছু মিল পেয়েছেন তদন্তকারীরা। পুলিশের দাবি, সাধারণত দুষ্কৃতীরা অপরাধের পরে অস্ত্র সঙ্গে নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রতিবারই আততায়ী তা ফেলে যাচ্ছে। এই কাণ্ড যে তারই ঘটানো, সে হয়তো সেটাই বোঝাতে চাইছে। এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘সাধারণ অপরাধীর আচরণ এমন হয় না। হয়তো খুনি বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ।’’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁচটি ঘটনাই ঘটেছে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টের মধ্যে। প্রতিটি ক্ষেত্রে দুষ্কৃতীর শিকার বাড়িতে একা থাকা মহিলা। যে দু’জন হামলার হাত থেকে বেঁচেছেন, তাঁরা পুলিশকে জানিয়েছেন, বিদ্যুতের মিটার দেখার নাম করে বাড়িতে ঢুকেছিল আততায়ী। নানা কথার ফাঁকে গলায় পেঁচিয়ে ধরে লোহার চেন। পুলিশের তদন্তে আরও উঠে এসেছে, গ্রামীণ এলাকায় মধ্যবিত্ত পরিবারে চড়াও হচ্ছে দুষ্কৃতী। ঘটনার পরে বাড়ি থেকে তেমন কিছু খোয়াও যায়নি। উপলতি গ্রামে আক্রান্ত বৃদ্ধার পরিবার সূত্রে জানা যায়, বাড়ির আলমারিতে টাকা থাকলেও তাতে হাত দেয়নি আততায়ী। কী কারণে এই কাণ্ড সে ঘটাচ্ছে, সেই প্রশ্নই চিন্তায় ফেলেছে পুলিশকে।
২০১৫ সালের তিনটি ঘটনার তদন্ত করা এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘এই ধরনের খুনিদের সিরিয়াল কিলার বলা হয়। সেই সময়ে আততায়ীকে ধরা যায়নি। এ বার দ্রুত গ্রেফতার না করতে পারলে তার সাহস আরও বেড়ে যাবে।’’ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায়ের অবশ্য আশ্বাস, ‘‘তদন্ত চলছে। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি অপরাধী ধরা পড়বে।’’