(বাঁ দিকে) গ্রেফতার অভিযুক্ত। যে চিরকুট দেখিয়ে পার হয় আলুর ট্রাক (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
রাজ্য সরকারের নির্দেশ, আপাতত বাংলা থেকে ভিন্রাজ্যে আলু সরবরাহ বন্ধ থাকবে। কিন্তু, দালাল মারফত ট্রাক-ট্রাক আলু রফতানি হয়ে যাচ্ছে অন্যান্য রাজ্যে। চিরকুটের রহস্যভেদ করে এমনই এক জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। আসানসোল থেকে পাকড়াও ওই অভিযুক্তের নাম চিকু। অভিযোগ, যে চিরকুট দেখিয়ে বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমানা দিয়ে আলুর গাড়ি পাচার হত, তাতে লেখা থাকত অভিযুক্তের নাম।
বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমানায় আলুর ট্রাক আটকে দিচ্ছে পুলিশ। ফলে অনেক ট্রাকচালক আলুভর্তি গাড়ি নিয়ে সীমানা এলাকায় অপেক্ষা করছেন। তবে আলু যে ভিন্রাজ্যে যাচ্ছে না, এমনও নয়। চালকদের একাংশের দাবি, বিভিন্ন দালাল তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, রাতের অন্ধকারে আলু ‘পাচার’ করিয়ে দেওয়া হবে। পুলিশের কড়াকড়ি থাকবে না। তবে তার জন্য একটি কুপন নিতে হবে। ৫০০ টাকার বিনিময়ে সেই কুপন কিনে সীমানা এলাকায় নির্দিষ্ট কয়েক জনকে দেখালেই আলু পাচার হয়ে যেত। এই ভাবে বেশ কয়েকটি ট্রাক ইতিমধ্যে ঝাড়খণ্ডে চলেও গিয়েছে বলে দাবি অভিযোগকারী ট্রাকচালকদের।
ওই চালকদের আরও দাবি, ‘চিকুদা’ নামের একটি কুপনের জন্য ৫০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। তবে কোথাও কোথাও ১০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হয়। তাঁদের দাবি, আলুর জোগানে সমস্যা এবং আলুর দাম সে ভাবে না-কমার পিছনে এটাও কারণ।
পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করলেও বিষয়টি নিয়ে আসানসোল এলাকায় রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। পশ্চিম বর্ধমানের বিজেপি জেলা নেতা টিঙ্কু বর্মা বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বার বার নির্দেশ দেওয়ার পরেও এই ভাবে আসানসোলের ডুবুরি চেকপোস্ট এলাকা দিয়ে ঝাড়খণ্ডে আলু পাচারের চক্র কাজ করছে। আলুর গাড়ি আটকানোর জন্য সমস্ত রকম ব্যবস্থা করা সত্ত্বেও কী ভাবে এটা সম্ভব হচ্ছে।’’ বিজেপি নেতার অভিযোগ, এর নেপথ্যে পুলিশের একাংশের হাত থাকতে পারে। তিনি জেলাশাসককে বিষয়টি দেখার জন্য আবেদন জানিয়েছেন। কংগ্রেসে নেতা সুকান্ত দাসের খোঁচা, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশও যদি পুলিশ এবং প্রশাসন এই ভাবে পালন করে তা হলে আর কী করা যায়?’’ যদিও শাসকদলের তরফে বিমান দত্ত জানান, এই রকম খবর পাওয়ার পরেই তিনি পুলিশ কমিশনারকে বিষয়টি দেখার জন্য অনুরোধ করবেন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হোক। এসিপি (পশ্চিম) শেখ জাভদ হোসেন এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘ইতিমধ্যে ওই চিকুদাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁকে আসানসোল আদালতে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্তের বাড়ি স্থানীয় চলবলপুর গ্রামে। তার ভাল নাম জয়ন্ত অধিকারী। কী ভাবে তাঁরা এই কাজ করতেন, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’