—প্রতীকী চিত্র।
রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা দফতর আপত্তি জানানোয় আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্ট বৈঠক ও সমাবর্তন অনুষ্ঠান আয়োজন নিয়ে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। উচ্চ শিক্ষা দফতর শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ামককে চিঠি দিয়ে আপত্তির কথা জানিয়েছে। এই অনুষ্ঠানের জন্য উচ্চ শিক্ষা দফতরের কোনও অনুমতি নেই বলে জানা গিয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ামক চন্দন কোনার জানিয়েছেন। উচ্চ শিক্ষা দফতরের অনুমতি ছাড়া অনুষ্ঠান হলে বিরোধিতা করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। রাজ্যের দফতরের অনুমতি ছাড়া অনুষ্ঠান করা উচিত নয় বলে দাবি তৃণমূল প্রভাবিত কলেজ শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপা নেতৃত্বেরও।
কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৭ মার্চ কোর্ট বৈঠক ও সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে আচার্য তথা রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস থাকবেন বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে অনুষ্ঠান সূচি প্রকাশ করে জানানো হয়েছে, সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আগে, সকাল ১০টা ৫৮ মিনিটে রাজ্যপাল কোর্ট বৈঠকে যোগ দেবেন। এর পরে সাড়ে ১১টা নাগাদ শুরু হবে সমাবর্তন অনুষ্ঠান।
এই সূচি প্রকাশের পরেই আপত্তি তুলেছে উচ্চ শিক্ষা দফতর। দফতরের তরফে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মককে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন কোনও স্থায়ী উপাচার্য নেই। দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় অস্থায়ী উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছেন। যেহেতু স্থায়ী উপচার্য নেই, তাই কোর্ট বৈঠক ও সমাবর্তন আয়োজন নিয়ম বহির্ভূত। এমনকি, এই অনুষ্ঠান আয়োজনে উচ্চ শিক্ষা দফতরের অনুমতিও নেই বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। তা ছাড়া, লোকসভা নির্বাচন উপলক্ষে আদর্শ আচরণ বিধির প্রসঙ্গও স্মরণে রাখার কথা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই চিঠি আসার পরেই অনুষ্ঠান নিয়ে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ামক চন্দন কোনার বলেন, ‘‘বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে এনেছি। উপাচার্যের কাছে শিক্ষা দফতরের চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছি।’’ উপাচার্যকে বার বার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। মেসেজের উত্তর দেননি।
তৃণমূল প্রভাবিত কলেজ শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপার জেলা আহ্বায়ক বীরু রজকের বক্তব্য, ‘‘অস্থায়ী উপাচার্যের সময়ে কোর্ট বৈঠক হতে পারে না। তা না হলে সমাবর্তন অনুষ্ঠানও হওয়ার কথা নয়। ফলে, এই অনুষ্ঠানের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।’’ তাঁর দাবি, রাজ্য সরকারের অর্থ অনুমোদনে এই বিশ্ববিদ্যালয় চলে। তাই উচ্চ শিক্ষা দফতরের মতামত প্রাধান্য দেওয়া উচিত। ওয়েবকুপার বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের নেত্রী তথা সংগঠনের রাজ্য নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গুহরায়ের বক্তব্য, ‘‘আমরা বিষয়টি সংগঠনের উচ্চ নেতৃত্ব ও রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীকে জানিয়েছি। তিনি যেমন নির্দেশ দেবেন, সেই মতো পদক্ষেপ করব।’’ অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদও। সংগঠনের জেলা সভাপতি অভিনব মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘আমরা অনুষ্ঠান বয়কট করেছি। রাজ্যের আপত্তি ছাড়া এই অনুষ্ঠান হলে সে দিন বিক্ষোভ হবে।’’
কয়েক মাস আগে রাজ্যপাল অনুমতি না দেওয়ায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্ট বৈঠক ও সমাবর্তন নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছিল। পরে সে সমস্যা মেটে। এ বার উচ্চ শিক্ষা দফতরের আপত্তিতে একই রকম জট তৈরি হল কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে। এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক সুদীপ তুরির প্রতিক্রিয়া, ‘‘সমাবর্তন অনুষ্ঠানের জন্য পড়ুয়ারা অপেক্ষা করে থাকেন। রাজ্য সরকার ও রাজ্যপালের দড়ি টানাটানিতে পড়ুয়াদের আবেগ ও স্বার্থ ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। অবিলম্বে এই দ্বন্দ্ব বন্ধহওয়া উচিত।’’