উপরে, বিকেলে কাটোয়ার রাস্তায় নজরবন্দি। নীচে বাঁ দিকে, বর্ধমানের নীলপুরে বিধিনিষেধ সত্ত্বেও চায়ের দোকানে ভিড় জমেছে। ডান দিকে, বাঁশের ব্যারিকেড টপকে চলছে যাতায়াত। রবিবার। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় ও উদিত সিংহ
লম্বা লাফে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। পূর্ব বর্ধমান জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দু’শোয় পৌঁছতে সময় লেগেছিল প্রায় দু’মাস। তার পরে তিনশোয় পৌঁছে যায় মাত্র ন’দিনের মধ্যে। রবিবার সেই সংখ্যা সাড়ে তিনশো পেরিয়ে গেল। এ ভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় চিন্তার ভাঁজ জেলার কর্তাদের কপালে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, পূর্ব বর্ধমানে ৯ জুলাই আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২০৪। ১৭ জুলাইয়ের মধ্যে আরও শ’খানেক করোনা রোগীর সন্ধান মেলে। শনি ও রবিবার ৩৫ ও ২৫ জনের করোনা-রিপোর্ট ‘পজ়িটিভ’ এসেছে। এর মধ্যে রবিবার জামালপুরে ১২ জন আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। তাঁদের মধ্যে প্রসূতিও রয়েছেন। এখনও পর্যন্ত বর্ধমান শহরে ৪৩ জন, কেতুগ্রাম ১ ব্লকে ৩৪ জন, মঙ্গলকোটে ২৫ জন ও কাটোয়া শহরে ২০ জন আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। জেলায় দু’জনের মৃত্যুও হয়েছে।
হঠাৎ হুড়মুড়িয়ে করোনা-সংক্রমণ কেন বাড়ছে, উঠছে প্রশ্ন। ইতিমধ্যে জেলা পুলিশের এক কর্তা আক্রান্ত হওয়ায় চিন্তা বেড়েছে প্রশাসনিক মহলেও। প্রশাসনের বেশ কয়েকজন আধিকারিককে নিভৃতবাসে পাঠানো হয়েছে। করোনা-পরীক্ষার জন্য আজ, সোমবার থেকে সংস্কৃত লোকমঞ্চে প্রশাসনের আধিকারিক-কর্মীদের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হবে বলে জানা গিয়েছে। একই সঙ্গে নির্মীয়মাণ জেলা কৃষি ভবনে ফের লালারস সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু করতে চলেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। চিন্তা বাড়ছে স্বাস্থ্য বিভাগেও। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসক করোনায় আক্রন্ত হয়েছেন। তাঁদের সংস্পর্শে আসা চিকিৎসক-নার্সদের নিভৃতবাসে পাঠাতে হয়েছে।
জেলার স্বাস্থ্য-কর্তাদের একাংশ জানান, যে হারে আক্রান্ত বাড়ছে, তাতে চিকিৎসা কী ভাবে হবে, সে নিয়েই চিন্তায় তাঁরা। জেলার একমাত্র ‘কোভিড’ হাসপাতাল প্রায় ভর্তি হয়ে গিয়েছে। ওই হাসপাতালে শুধু পূর্ব বর্ধমান নয়, হুগলির আক্রান্তেরাও থাকছেন। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ‘সারি’ ওয়ার্ডও প্রায় ভর্তি। কাটোয়া ও কালনা মহকুমায় কোনও ‘কোভিড’ হাসপাতাল নেই। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘সব রোগীর জন্য হাসপাতালের প্রয়োজন নেই। সুবিধা থাকলে আক্রান্তেরা ‘হোম আইসোলেশন’-এ থাকতে পারবেন। যাঁদের সুযোগ নেই, তাঁরা ‘সেফ হোম’-এ থাকবেন। উপসর্গ দেখা গেলে কোভিড হাসপাতালে আনা হবে।’’
এক সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা এই হারে বাড়ল কেন? জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসনের কর্তারা মনে করছেন, ফিরে আসার পরে পরিযায়ী শ্রমিকদের অনেকে এলাকায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকে করোনা-আক্রান্ত থাকলেও উপসর্গহীন হওয়ার ফলে পরীক্ষা করানো হয়নি। এর জেরেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। আবার ‘লকডাউন’ শিথিল হওয়ার পরে দুই ২৪ পরগনা, কলকাতা, হাওড়া ও হুগলির সঙ্গে যোগাযোগ বেড়েছে। সেই সূত্রেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) প্রণব রায় বলেন, ‘‘মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব দেখা যাচ্ছে। গা-ছাড়া মনোভাবও প্রকট হয়ে উঠছে।’’ এই পরিস্থিতিতে ‘এলাকা-লকডাউন’ করা, সচেতনতা বাড়ানোর জন্য রাস্তার বিভিন্ন মোড়ে মাইকে করে প্রচার, ‘মাস্ক’ ব্যবহার বাধ্যতামূলক, জনবহুল এলাকায় ভিড় কমানোর জন্য দোকান খোলায় বিধিনিষেধ প্রয়োগ ও প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না বেরনোর উপর জোর দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। রবিবার জেলায় ৮০টি জায়গা গণ্ডিবদ্ধ করা হয়েছে।