প্রতীকী ছবি।
১৮ বছর পার করে মেয়ের বিয়ে হলে রূপশ্রী প্রকল্পে মিলতে পারে ২৫ হাজার টাকা। যে সব পরিবারের বার্ষিক আয় দেড় লক্ষ টাকা বা তার কম, তারাই এই সুবিধে পান। কিন্তু আউশগ্রামে ১৫ শতাংশ জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষের মাত্র এক শতাংশ আবেদন করেছেন এই প্রকল্পে। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি সাবালিকা হওয়ার আগেই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, না কি সরকারি স্তরে প্রচারের অভাব রয়েছে। প্রশাসনের অবশ্য দাবি, সরকারি সুযোগ-সুবিধা দিতে এলাকায় ব্যাপক প্রচার চালানো হয়। এর পরেও কোথায় ঘাটতি রয়েছে তা দেখা হচ্ছে।
বুধবার থেকে জেলার নানা অংশের সঙ্গে আউশগ্রাম ১ ব্লকেও শুরু হয়েছে তিন দিনের আদিবাসী মেলা। জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষজনকে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প, তাঁদের সুযোগ নিয়ে জানানো হচ্ছে। কৃতীদের সংবর্ধনা, শিক্ষা সামগ্রী বিলির মতো নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। তার পরেও গোটা ব্লক জুড়ে এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে আর্জি জানিয়েছেন জনজাতি সম্প্রদায়ের ছ’জন। গোটা ব্লকে সংখ্যাটা পাঁচশো। পরিসংখ্যান যে উদ্বেগের তা মানছেন ওই সম্প্রদায়েরই একাংশ।
যাদবগঞ্জের বাসিন্দা, পেশায় শিক্ষক উৎপল বেসরার দাবি, “সরকারি স্তরে সচেতনতায় কোথাও ঘাটতি থাকছে। সেই কারণেই এই করুণ চিত্র।’’ তাঁর দাবি, আদিবাসী সম্পদায়ের অনেক মেয়েই মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়ে দেয়। ১৮ বছর বয়সের আগে লুকিয়ে অনেকের বিয়েও দেওয়া হয়। ফলে, সরকারি ওই সুবিধা পায় না তারা। জনজাতি সম্প্রদায় নিয়ে কাজ করা সুকুমার সরেনেরও দাবি, “সাংসারিক চাপে অধিকাংশ মেয়ে পড়াশোনা ছেড়ে কাজে লেগে পড়ে। অল্প বয়সে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার একটা প্রবণতাও রয়েছে।’’ বনপাড়ার সুমি সরেন, চরণপাড়ার মামনি টুডুদেরও দাবি, ‘‘অনেক সময় মেয়েরা নিজেরাও পছন্দের পাত্রের সঙ্গে বিয়ে করে নেয়। পরিবারের কিছু করার থাকে না।’’
সিপিএমের আউশগ্রাম ১ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সহ-সভাপতি মঙ্গলা মার্ডির অভিযোগ, “শাসকদলের নেতারা আদিবাসীদের অনেক উন্নয়ন হয়েছে বলে দাবি করেন। কিন্তু এই পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে রাজ্যে আদিবাসীদের হাল কেমন।’’ তৃণমূল বিধায়ক অভেদানন্দ থান্দার বলেন, ‘‘বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা আরও বেশি করে ওই সম্প্রদায়ের মধ্যে পৌঁছে দিতে হবে।’’
বিডিও চিত্তজিৎ বসুর দাবি, বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প নিয়ে প্রশাসনের তরফে প্রচার চালানো হয়। রূপশ্রী প্রকল্প নিয়েও বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ভাবে প্রচার চলছে। তবু জনজাতি সম্প্রদায় থেকে কী কারণে ওই প্রকল্পে এত কম আবেদনপত্র জমা পড়েছে, তা খোঁজ নিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
এই ব্লকে জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ প্রায় ১৮ হাজার। তৃ্ণমূলের রাজ্য আদিবাসী সেলের সভাপতি দেবু টুডুর দাবি, ‘‘এই পরিসংখ্যান থেকে বলা যেতেই পারে কোথাও বোঝানোর খামতি রয়েছে।
অনেকেই বিয়ের বহু বছর পরেও রূপশ্রীর জন্য আবেদন করছেন বলে মাঝেমধ্যই শোনা যায়। অথচ যাঁরা সত্যিই পাওয়ার যোগ্য, তাঁরাই পাচ্ছেন না।’’ তাঁর পরামর্শ, ‘‘অনেকেই প্রকল্পগুলি সম্পর্কে জানেন না, বোঝেন না। কোথায় আবেদন করতে হবে, কি কি দিতে হবে এ সব জানানোর দায়িত্ব জনপ্রতিনিধি, আধিকারিকদের। এলাকায় নজর রাখতে হবে কাদের বিয়ে হচ্ছে, কত বছরে বিয়ে হচ্ছে। প্রয়োজনে তাদের কাছে গিয়ে আবেদন করিয়ে নিতে হবে।’’