লোক ঢুকছে ইচ্ছে মতো, কালনা হাসপাতালে রক্ষীর চেয়ার ফাঁকাই

ঘড়িতে কাঁটায় কাঁটায় আটটা। হাসপাতালে ঢুকলেন মেডিসিন বিভাগের এক চিকিৎসক। একের পর এক ওয়ার্ড ঘুরে খুঁটিয়ে দেখলেন রোগীদের শারীরিক পরিস্থিতি। নার্সদের প্রয়োজনীয় পরামর্শও দিয়ে গেলেন। বেলা এগারোটা পর্যন্ত চললো তাঁর ঘোরাফেরা।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

কালনা শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৫ ০২:০৩
Share:

ফাঁকা পড়ে রক্ষীর চেয়ার। চলছে অনবরত যাতায়াত। —নিজস্ব চিত্র।

ঘড়িতে কাঁটায় কাঁটায় আটটা। হাসপাতালে ঢুকলেন মেডিসিন বিভাগের এক চিকিৎসক। একের পর এক ওয়ার্ড ঘুরে খুঁটিয়ে দেখলেন রোগীদের শারীরিক পরিস্থিতি। নার্সদের প্রয়োজনীয় পরামর্শও দিয়ে গেলেন। বেলা এগারোটা পর্যন্ত চললো তাঁর ঘোরাফেরা। এর মধ্যেই সকাল ৯টা থেকে শুরু হল হাসপাতাল সাফসুতরো করার কাজ। শৌচাগার, অপারেশন থিয়েটর, প্রসুতির বিভাগ সহ বিভিন্ন বিভাগের সামনে ছাড়ান হল ব্লিচিং। ১২টা নাগাদ শিশু বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রয়োজন হতেই পনেরো মিনিটের মধ্যে হাজির হলেন তিনি। বেলা ১টা নাগাদ মধুপুরের বাসিন্দা কোহিনুর বিবি তাঁর এক আত্মীয়ার জন্য মাতৃযান চাইলেন। হাসপাতালের সহায়তা কেন্দ্র মিনিট কুড়ির মধ্যেই সব ব্যবস্থা করে দিল।

Advertisement

বছর খানেক আগে যাঁরা কালনা হাসপাতালে এসেছেন তাঁদের এ সব বিশ্বাসই হবে না। চিকিৎসক না থাকা, পরিষেবা না মেলা নিয়ে অজস্র অভিযোগ যেখানে হাসপাতালের রোজনামচা ছিল, সেখানে এত দ্রুত পরিষেবা মেলা তাও আবার ছুটির দিনে— অবিশ্বাস্য মনে হবে অনেকের কাছেই। যদিও এ ছবির মানে এমন নয় যে হাসপাতাল এখন সব পেয়েছির দেশ। রোগীদের দাবি, মেডিসিন বিভাগের হাল ফিরেছে অনেকটাই। দিনে রাতে সবসময়েই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দেখা মিলছে। শ্বাসকষ্ট নিয়ে মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৭০ বছরের মানিকচন্দ্র দাস। তিনিই বললেন, ‘‘সকালে, সন্ধ্যায় চিকিৎসক দেখে যাচ্ছেন। বেশির ভাগ ওষুধ হাসপাতাল থেকেই পাচ্ছি। খাবারও ভালই।’’ যদিও নাদনঘাটের বাসিন্দা সিরাজ শেখের মতো কয়েকজন জানান, কয়েকজন চিকিৎসক রয়েছেন যাঁরা খামখেয়ালি আচারন করেন। সপ্তাহে তিন-চার দিনের বেশি দেখাও যায় না তাঁদের। অন্য রোগীর পরিজনেরা জানান, বছর খানেক আগেও হাসপাতালে পানীয় জলের সমস্যা ছিল। ফলে বাইরে থেকে কিনে খেতে হতো। কিন্তু এখন বিশুদ্ধ জল সরাবরাহের যন্ত্র বসেছে।

সপ্তাহের অন্য দিনের তুলনায় রবিবার হাসপাতালের চেহারাটা একটু অন্যরকমই থাকে। বহিবিভাগ বন্ধ থাকায় রোগীদের লম্বা লাইন দেখা যায় না। খোলা থাকে না সুপারের কার্যালয়। এমনকী হাসপাতালে ভর্তি রোগীর রক্তের জরুরি প্রয়োজন না থাকলে খোলে না ব্ল্যাড ব্যাঙ্কও। এ দিনও দেখা গেল বর্হিবিভাগের সামনে ঝুলছে লম্বা বোর্ড। তাতে চিকিৎসকদের তালিকা লেখা রয়েছে। তার মধ্যেই বড় বড় হরফে উল্লেখ করা এই মুহূর্তে দন্ত চিকিৎসক নেই। সপ্তাহ খানেক ধরে খারাপ আলট্রাসোনোগ্রাফি করার যন্ত্রও।

Advertisement

তবে এর মধ্যেই সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ল রক্ষীর ফাঁকা চেয়ার। বেশির ভাগ দরজার সামনেই টিকি মেলেনি কোনও নিরাপত্তা রক্ষীর। ফলে দলে দলে বিভিন্ন ওয়ার্ডে অজস্র লোকজনকে ঢুকতে বেরোতে দেখা গেল। অথচ হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডের সামনে বড় বড় অক্ষরে লেখা রয়েছে রোগীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় সকাল সাড়ে সাতটা থেকে সাড়ে আটটা এবং বিকেল চারটে থেকে সন্ধ্যা ৬টা।

কিছু খামতি যে রয়েছে তা মেনে নিয়েছেন হাসপাতাল সুপার কৃষ্ণচন্দ্র বড়াই। তিনি বলেন, ‘‘চিকিৎসকদের পরিষেবা নিয়ে এখন আর তেমন অভিযোগ আসে না। তবে এটা ঠিক কয়েকজন এখনও ঠিকঠাক সহযোগিতা করছেন না। এদের মধ্যে দু’জনকে সতর্ক করা হয়েছে।’’ তিনি আরও জানান, দন্ত বিভাগের চিকিৎসক চাকরি ছেড়ে দেওয়াই একটা সমস্যা তৈরি হয়েছে। বিষয়টি স্বাস্থ্যভবনে জানানো হয়েছে। এক জন চর্ম রোগ বিশেষজ্ঞ আনার চেষ্টা চলছে বলেও তাঁর দাবি। সুপারের আশ্বাস, ‘‘আশা করছি ২০১৬ সালের অগস্টের মধ্যে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরির কাজ শেষ হয়ে যাবে। হাসপাতালের ভোল বদল হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement