নিয়মিত পরিষ্কার হয় না শ্মশান। নিজস্ব চিত্র।
শীত হোক বা গ্রীষ্ম, বছরভর বন্ধ বাড়ির জানালা। জানলাটা একটু খুললেই যে ঘরময় ধোঁয়া আর দুর্গন্ধে নাকাল হতে হবে। কারণ, পাশেই রয়েছে শ্মশান। বাড়ির মানুষটাকে দাহ করার জায়গা মেলে কই! শেষমেশ ঘরের লোকজনই কিছুটা জায়গা পরিষ্কার করে দাহ পর্ব সারতে হল। আসানসোল, কুলটির বিভিন্ন শ্মশানে দুর্ভোগের এমন টুকরো ছবিগুলো নিত্য দিনের। বাসিন্দাদের একাংশের আক্ষেপ, আসানসোল পুরনিগম তৈরি হলেও শিল্পাঞ্চলের শ্মশানের বেহাল ছবিটার বদল হয়নি।
পুরনিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, আসানসোলের ৫০টি ওয়ার্ডের জন্য রয়েছে মোটে দু’টি শ্মশান। দু’নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে কাল্লা সংলগ্ন দোমহানি শ্মশান আর বার্নপুরের দামোদর নদের তীরে কালাঝড়িয়া শ্মশান ঘাট। কুলটির ৩৫টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের জন্য রয়েছে ডিসেরগড়ের ছিন্নমস্তা, বরাকরের মনবেড়িয়া, চিনাকুড়ির রামঘাট, কল্যাণেশ্বরী, কুলটির কুলতড়া ও চলবলপুরের চৌরিঙ্গি— এই ৬টি শ্মশান। প্রতিটা শ্মশানেই পরিকাঠামো নিয়ে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।
আসানসোলের দোমহানি শ্মশান ১৯৪২ সালে সরকারি ভাবে চালু হয়। বাসিন্দাদের আক্ষেপ, সময়ের সঙ্গে তাল রেখে পুরনো এই শ্মশানটির পরিকাঠামোর তেমন কোনও উন্নয়ন হয়নি। এখনও কাঠ, কয়লার চুল্লিতে শবদাহ করা হয়। এর জেরে এলাকায় বাড়ছে দূষণ। আসানসোল জেলা হাসপাতালের বিভিন্ন বেওয়ারিশ লাশও দাহ করা হয় এই শ্মশানে। এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘দিনভর দাহ করা হয়। দুর্গন্ধের জেরে ঘরে টেকা দায় হয়ে পড়ে।’’ বাসিন্দাদের দাবি, অবিলম্বে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানো হোক। বার্নপুরের দামোদরের পাড়ে ইস্কোর তরফে তৈরি করা হয় কালাঝড়িয়া শ্মশান। শবদাহের জায়গা ও শবযাত্রীদের বিশ্রামের জন্য একটি ঘরও বানিয়ে দিয়েছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পুর উদ্যোগে পরিকাঠামো উন্নয়নের কোনও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ।
কুলটির শ্মশানগুলি আরও বেহাল। বাসিন্দারা জানান, ডিসেরগড়ের ছিন্নমস্তা শ্মশানের হাল তুলনামূলক ভাবে একটু ভাল। ইসিএলের তরফে বেশ কিছু পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে বলে বাসিন্দারা জানান। কিন্তু পুরসভার অধীনে থাকা বাকি ৫টির হাল খুবই খারাপ বলে জানান বাসিন্দারা। বৈদ্যুতিক চুল্লি তো দূরঅস্ত। দাহ করার জন্য এক চিলতে জায়গা খুঁজে পেতেও অনেক সময় কালঘাম ছুটে যায় শবযাত্রীদের। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কুলতড়া, চৌরঙ্গি, মনবেড়িয়া, চিনাকুড়ির রামঘাট শ্মশান ঢেকে গিয়েছে আবর্জনা আর জঙ্গলে। দাহ করতে গেলে শবযাত্রীদেরই এলাকা পরিষ্কার করতে হয়। সমস্যা চরম আকার নেয় বর্ষাকালে। কোনও ছাউনি না থাকায় ভরসা করতে হয় ত্রিপলের ছাউনির উপর। নেই পানীয় জল, শবযাত্রীদের বসার জায়গাও।
আসানসোল উত্তরের বিদায়ী বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক অবশ্য জানান, বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে দোমহানি শ্মশানের পরিকাঠামোগত উন্নয়নের পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য সরকার। তিন কোটি টাকা খরচে বৈদ্যুতিক চুল্লিও দ্রুত বসানো হবে বলে আশ্বাস মলয়বাবুর। মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারিরও আশ্বাস, পুরসভার অধীনে থাকা শ্মশানগুলির পরিকাঠামোগত উন্নতির জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।