থইথই ভিড়: কাটোয়ার একটি স্কুলে। নিজস্ব চিত্র।
সরস্বতী পুজো উপলক্ষে শুক্রবার সকাল থেকে পূর্ব বর্ধমানের কালনা শহরের মণ্ডপ ও পথে যেন জনস্রোত নামল। যা দেখে শহরবাসীর অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, এ দিন যে ভাবে পথে ভিড় নামল এবং তাঁদের অধিকাংশ মাস্কহীন, তাতে চিন্তার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
যদিও প্রশাসন জানাচ্ছে, এ বার উৎসবের আগে ক্লাব কর্তাদের নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠকে করোনা-বিধি মেনে পুজো করার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কালনা পুরসভার তরফে ঘোষণা করা হয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে পুজো করা ক্লাবগুলির মধ্যে প্রথম তিনটিকে আর্থিক পুরস্কার দেওয়া হবে। কালনার এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা প্রচার চালাচ্ছি। পথে বেরোনো লোকজনকে মাস্ক পরা-সহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলা হচ্ছে।’’
তবে বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, এ দিন সকাল থেকে শহরের পথে অনিয়ন্ত্রিত ভিড়ই দেখা গিয়েছে। বেলা যত গড়িয়েছে সাজগোজ করা তরুণ-তরুণীদের ভিড় বেড়েছে। অনেকে দল বেঁধে হোটেল, রেস্তরাঁয় খাওয়াদাওয়া করেন। বেশ কিছু ক্লাবের সদস্যেরা বাদ্যযন্ত্র নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন রাস্তায়। তাঁদের পিছনে যেতে দেখা যায় বহু মানুষকে।
ভিড়ের চিত্র দেখা গিয়েছে বড় ক্লাবের মণ্ডপগুলিতেও। ভিড়ের মধ্যে বহু মানুষকে দেখা যায় মাস্ক ছাড়া, দিব্যি ঘোরাঘুরি করছেন। মাস্ক না পরার প্রবণতা বেশি দেখা যায় কম বয়সীদের মধ্যে। কলেজ পড়ুয়া তাপসী সরকারের দাবি, ‘‘এই বিশেষ দিনে বন্ধুদের নিয়ে নানা জায়গায় ঘুরছি, খাওয়া-দাওয়া করেছি এবং দেদার ‘সেলফি’ তুলছি। করোনা সংক্রমণ এখন আর তেমন নেই বলেই মাস্ক আনিনি।’’ শহরের এক মণ্ডপে দাঁড়িয়ে প্রণয় গুপ্ত নামে এক যুবক বলেন, ‘‘মাস্ক পরলে, কেউ চিনতে পারে না। তাই পকেটে নিয়ে বেরিয়েছি। দরকার হলে পরে নেব।’’ তরুণ-তরুণীদের অনেকেরই দাবি, সরস্বতী পুজোর জন্য মাস খানেক আগে থেকে তাঁরা প্রস্তুতি নিয়েছেন। পুজোর দিনে মাস্ক পরলে, তাতে নিজেদের ঠিকঠাক তুলে ধরা যেত না। তাই মাস্কে ‘না’।
কালনা শহরে সরস্বতীপুজো নিয়ে তিন-চার দিন ধরে উৎসব চলে। প্রথম দিনের এই ভিড় দেখে অনেকেই উদ্বেগে। তাঁদের একাংশের মতে, প্রশাসনের আরও কড়া হওয়া উচিত। ক্লাব-কর্তাদের অবশ্য দাবি, তাঁরা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পুজো করছেন। শহরের একটি ক্লাবের উদ্যোক্তাদের তরফে পার্থসারথি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মণ্ডপে স্যানিটাইজ়ার দরজা রয়েছে। যাঁদের মাস্ক নেই, তাঁদের তা বিলি করা হচ্ছে।’’
তবে স্বাস্থ্যবিধি মানার পক্ষেই জোর দিয়েছেন ডাক্তারেরা। কালনা হাসপাতালের সুপার অরূপরতন করন বলেন, ‘‘সংক্রমণ কমেছে ঠিকই। তবে এখনও ভিড় এড়িয়ে চলা, মাস্ক পরার মতো বিষয়গুলি সাধারণ মানুষের মেনে চলা দরকার।’’