ছটপুজো উপলক্ষে ভিড়, দুর্গাপুর ব্যারাজের নীচে।
থিক-থিক করছে ভিড়। উধাও দূরত্ববিধি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভক্তদের মাস্কও পরতে দেখা যায়নি। তারস্বরে বাজছে লাউড স্পিকার। ছটপুজো উপলক্ষে বুধবার এমনই চিত্র দেখা গিয়েছে পশ্চিম বর্ধমানের বেশির ভাগ জায়গায়। যদিও পুলিশ এবং প্রশাসন সচেতনতা প্রচার ও ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, আসানসোল মহকুমায় মোট ২৩৪টি পুকুর এবং নদ-নদীর ঘাটে, অণ্ডালে ১৪টি এবং পাণ্ডবেশ্বরে ১৮টি ঘাটে ছটপুজো হয়। দুর্গাপুরে মূলত কুমারমঙ্গলম পার্ক, দামোদরের বীরভানপুর, পুরষার ঘাটে, দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকে অজয় নদে মাধাইপুর, পানশিউলি ঘাটে এই পুজো হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, যে দু’টি ‘অনিয়ম’ নজরে পড়ার মতো, তা হল: শব্দ-যন্ত্রণা এবং কোভিড-বিধি না মানা। আসানসোল, দুর্গাপুর, রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া-সহ সর্বত্র দেখা গিয়েছে বড়-বড় সাউন্ড বক্স নিয়ে, তারস্বরে মাইক বাজিয়ে ঘাটে চলেছেন ভক্তেরা। তেমনই একটি দলের সঙ্গে থাকা রানিগঞ্জের সাধন সিংহের যদিও দাবি, “নির্দিষ্ট মাত্রা মেনেই মাইক বাজানো হয়েছে।” ঘটনাচক্রে, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রের খবর, শিল্পাঞ্চলে শব্দের নির্ধারিত মাত্রা দিনে ৭৫ এবং রাতে ৭০, বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৬৫ এবং রাতে ৫৫ ডেসিবেলের মধ্যে থাকার কথা। বসতি এলাকায় দিনে ৫৫ এবং রাতে ৪৫ ডেসিবেল-এর মধ্যে শব্দ-মাত্রা থাকার কথা। কোথাও শব্দ-বিধি মানা হয়নি বলেই অভিযোগ। যদিও, আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার সুধীরকুমার নীলাকান্তম বলেন, “আমাদের কাছে এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও অভিযোগ আসেনি। তবে বিষয়টি খতিয়ে
দেখা হবে।”
কোভিড-পরিস্থিতির মধ্যে বিভিন্ন ঘাটে ভক্তদের ভিড়, মাস্ক না পরার ছবিটা চিন্তা বাড়িয়েছে চিকিৎসকদের। রাজ্যের কোভিড মনিটরিং কমিটির পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানের জেলা কো-অর্ডিনেটর সমরেন্দ্রকুমার বসু বলেন, “শারদ উৎসবের সময় থেকেই লাগামছাড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। এ ধরনের ভিড় করার অর্থ, বিপদকে ঘরে ডেকে আনা। এই পরিস্থিতিতে জরুরি সতর্কতা। অথচ, দেখা যাচ্ছে নাগরিক অসচেতনতার ছবিটাই।” স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি নিয়ে ‘কার্যত’ হাল ছেড়ে দিতে দেখা গিয়েছে উদ্যোক্তাদেরও। রানিগঞ্জের ‘পণ্ডিতপুকুর ছট কমিটি’র তরফে দীপু গোপ, উত্তম গোপরা বলেন, “আমরা যথাসাধ্য সচেতনতা প্রচার করছি। পর্যাপ্ত সংখ্যায় মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার রাখা হলেও মানুষ এ সবের ধার ধারছেন না।”
দুর্গাপুর-সহ বিভিন্ন ঘাটে থাকা পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবীদের মাস্ক বিতরণ করতে দেখা গিয়েছে। গোপালমাঠে শিবশক্তি ধাম ছটপুজোয় নজরদারি চালাতে দেখা গিয়েছে ডিসি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্তকে। তিনি বলেন, “নির্বিঘ্নে ছটপুজো সম্পন্ন করতে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি যাতে মানা হয়, সে জন্য কড়া নজরদারি রাখা হয়েছে।” ‘পানাগড় বাজার ছট পুজো কমিটি’ মাস্ক আছে কি না, তা দেখেই ভক্তদের ঘাটে যেতে দিয়েছে। পানাগড় স্টেশন লাগোয়া জলাশয়ের পথে নজরদারি চালিয়েছে রেল পুলিশও। তবে কাঁকসায় মাস্ক পরেই ভক্তরা পুজো করতে গিয়েছেন।
ছটপুজো নির্বিঘ্নে করতে প্রশাসনের তরফে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। এ দিন দুপুর থেকেই দেখা যায়, জিটি রোড, বার্নপুর রোড, বরাকর রোড-সহ আসানসোলের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় পুলিশ যান নিয়ন্ত্রণ করছে। একই ছবি রানিগঞ্জ, পাণ্ডবেশ্বর, জামুড়িয়া-সহ জেলার অন্য প্রান্তেও। ভক্তদের হেঁটে যাওয়ার জন্য গার্ডরেল বসিয়ে আলাদা রাস্তা করে দেওয়া হয়েছে। প্রায় প্রতিটি ঘাটে বিপর্যয় ব্যবস্থাপন দফতর, পুলিশ এবং পুরসভার কর্মীদের, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যদের এবং ডুবুরিদের উপস্থিতি নজরে পড়েছে।
আসানসোল ও দুর্গাপুর পুরসভার তরফে পানীয় জল, আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। আসানসোলের পুর-প্রশাসক অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ছটপুজো শিল্পাঞ্চলের অন্যতম বড় উৎসব। তা উপলক্ষে আমাদের কর্মী ও আধিকারিকেরা পথে রয়েছেন। বরো কার্যালয়গুলিতে কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে।” প্রতিটি ব্লকে কন্ট্রোল রুম খোলার কথা জানিয়েছে পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসন।
পাশাপাশি, এ দিন বিভিন্ন ঘাট পরিদর্শন করেন আসানসোল উত্তরের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক।