East Bardhaman Heavy Rainfall

ক্ষতিগ্রস্ত তিনশো গ্রাম, সতর্কতা দামোদরে

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলার ২৩টি ব্লকের ৩৩৩টি গ্রাম ও তিনটি পুরসভার ৩৪টি ওয়ার্ডে প্রভাব পড়েছে। এ দিন বিকেল পর্যন্ত ১০,৩৪৮ জন বাসিন্দা ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২৪ ০৯:২৩
Share:

ভাঙন পরিদর্শন কালনায়। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল।

বৃষ্টি কমলেও শনিবার জলের তলাতেই রয়েছে পূর্ব বর্ধমানের বিস্তীর্ণ এলাকা। তার সঙ্গে চিন্তা বেড়েছে মাইথন, পাঞ্চেত ও দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে জল ছাড়া শুরু হওয়ায়। সেচ দফতরের পরামর্শে জেলা প্রশাসন জামালপুর ব্লককে সতর্ক করেছে। এ ছাড়া, দামোদরের ধারে খণ্ডঘোষের একটি গ্রামকেও প্রশাসন সতর্ক করেছে। শনিবার বিকেলে ব্লকের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের বৈঠকে ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

Advertisement

গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ২০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। জেলাশাসক কে রাধিকা আইয়ার বলেন, ‘‘সেচ দফতরে রিপোর্ট অনুযায়ী, অজয় প্রাথমিক বিপদসীমার ১ মিটার নীচে রয়েছে। দামোদর বিপদসীমার ৪ ফুট নীচ দিয়ে বইছে। ডিভিসি ধাপে ধাপে এক লক্ষ কিউসেক পর্যন্ত জল ছাড়বে।’’ সেচ দফতর সূত্রে জানা যায়, এ দিন বিকেল ৪টে পর্যন্ত ৫৯ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছে ডিভিসি। বৃষ্টির জল নিয়ে বর্ধমান থেকে হুগলি পৌঁছচ্ছে প্রায় ৭৫ হাজার কিউসেকে। তাতে জলস্ফীতি হবে। আবার, অজয়ে ৪০ হাজার কিউসেক জল বেরোচ্ছে। সেচ দফতরের দামোদর ক্যানাল ডিভিশনের সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার প্রদীপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এক লক্ষ কিউসেক পর্যন্ত জল ছাড়ার সম্ভাবনায় জেলায় কমলা সতর্কতার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। শুধু জামালপুরকে সতর্ক করার জন্য প্রচার করতে বলা হয়েছে। অজয়ের জল বেড়েছিল, কিন্তু ভাগীরথী অনেক নীচে থাকায় জল নামছে। ডিভিসি জল ছাড়লেও পূর্ব বর্ধমানে প্রভাবের সম্ভাবনা কম। বৃষ্টি না হলে চিন্তা বাড়বে না।”

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলার ২৩টি ব্লকের ৩৩৩টি গ্রাম ও তিনটি পুরসভার ৩৪টি ওয়ার্ডে প্রভাব পড়েছে। এ দিন বিকেল পর্যন্ত ১০,৩৪৮ জন বাসিন্দা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। আংশিক বাড়ি ভেঙেছে ১,৩৬১টি, সম্পূর্ণ বাড়ি ভেঙেছে ২৭২টি। ৫১১০ হেক্টর জমি ২৪ ঘণ্টা ধরে জলের তলায় রয়েছে বলে কৃষি দফতর রিপোর্ট দিয়েছে। তবে জল নেমে গেলে চাষে ক্ষতির সম্ভাবনা কম বলে জানিয়েছে। স্থায়ী ভাবে কোথাও ত্রাণ শিবির খোলা হয়নি।

Advertisement

কুনুরের জলে গুসকরার বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড জলের তলায়। শুক্রবার সকাল থেকেই জল ঢুকছিল। শনিবার পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়। শহরের মুরগি হাটতলা থেকে বাঁশের খাঁচায় করে জল পেরিয়ে আসবাব সামগ্রী নিয়ে শুকনো জায়গায় উঠতে দেখা যায় বাসিন্দাদের। অসিত সাউ, কৃষ্ণা সাউদের ক্ষোভ, “প্রশাসনের দেখা নেই। আমাদেরই জলে নেমে সামগ্রী সরাতে হচ্ছে। নলকূপ, ট্যাপ জলের তলায়। পানীয় জল পাওয়াই চিন্তার।” গুসকরার রটন্তী কালীতলা কাছে শ্মশান ৫ ফুট জলের নীচে। দেহ সৎকারের জন্য পুরসভা সুশীলা শ্মশানে বিকল্প ব্যবস্থা করেছে।

বর্ধমানের সাহাচেতন-সহ কয়েকটি এলাকাও জলের তলায়। মেমারি শহরে জলবন্দি অনেকে। কালনা শহর লাগোয়া নিউ মধুবন, পূর্বস্থলীর ভান্ডারটিকুরি, সমুদ্রগড়, শ্রীরামপুর জলমগ্ন। এলাকার একাংশে ফের গঙ্গার ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ দিন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ পূর্বস্থলী ১ ব্লকে বৈঠক করেন। তিনি জানান, ‘গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান’ এবং ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’ প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। মহকুমাশাসক (কালনা) শুভম আগরওয়াল বলেন, “নিউ মধুবনের ৬৭ জনকে একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। মন্তেশ্বর ও কালনা ১ ব্লক ক্ষতিগ্রস্থ।” কালনায় ভাগীরথীর পাড় ভাঙার খবর পেয়ে শনিবার বিকেলে পরিস্থিতি ঘুরে দেখেন মহকুমাশাসক, কালনার উপ-পুরপ্রধান তপন পোড়েল এবং পুলিশ ও সেচ দফতরের প্রতিনিধিরা। শহরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে ভাগীরথীর পাড়ে ফাটল দেখা যায় কিছু দিন আগে। বাসিন্দাদের দাবি, সেখানে কয়েক বস্তা বালি ফেলা হয়েছিল। নতুন করে কয়েকটি বড় ফাটল দেখা গিয়েছে। কাছেই রয়েছে পুরসভার জলপ্রকল্প। এ দিন আধিকারিকেরা লঞ্চে পর্যবেক্ষণ করেন। মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘সেচ দফতর ভাঙন মেরামতি শুরু করেছে।’’

মেমারির জাবুইয়ে বর্ধমান-কালনা রোডের উপরে জল বইছে। বেহাল নিকাশির অভিযোগে পথ অবরোধ হয়। দুর্ভোগে পড়েন পড়ুয়া থেকে সাধারণ মানুষজন। ব্লক প্রশাসনের আশ্বাসে অবরোধ ওঠে। গুসকরা-আউশগ্রামের রাস্তাতেও জল বয়ে যান চলাচল বন্ধ। শুক্রবার জল বার করার জন্য ভাতারের তিনটি বড় রাস্তা কেটে দেন বাসিন্দারা। এ দিন বলগনা-গুসকরা রাস্তায় পেট্রল পাম্পের কাছে ইট ফেলে অস্থায়ী রাস্তা সংস্কার করে যাতায়াত শুরু হয়েছে। বাদশাহি রোডে মুরাতিপুরে রাস্তা সংস্কার হয়নি। সে জন্য মানুষ অসুবিধায় পড়েছেন। ভাতার-মালডাঙা রোডে রাস্তা কাটা রয়েছে। ব্লকের এক কর্তা বলেন, “রাস্তাগুলি অস্থায়ী মেরামতের জন্য পঞ্চায়েতকে বলা হয়েছে।” ভাতার গ্রামে শনিবার একটি গাছ ভেঙে বাড়ির উপরে পড়ে, বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে গিয়েছে। পাঁচটি গবাদি পশু জখম হয়।

কাটোয়ার চৌঢাক গ্রাম গত দু’দিন ধরে জলবন্দি। দিঘি উপচে শনিবারও ৪-৫ ফুট উচ্চতায় জল দাঁড়িয়েছিল। একই পরিস্থিতি কাটোয়ার শ্রীরামপুর গ্রামে। চৌঢাক গ্রামের বাসিন্দা সইফুদ্দিন শেখ, রুকসানা বেগম বলেন, “শুকনো খাবার খেয়ে কোনও রকমে কাটাচ্ছি।” বিধায়ক (মঙ্গলকোট) অপূর্ব চৌধুরী বলেন, “টানা বৃষ্টিতে কয়েকটি গ্রামে সমস্যা হয়েছে। প্রশাসনের নজরে রয়েছে।” দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয় চওড়া হওয়ার ফলে নর্দমা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় জল জমেছে শক্তিগড়ের স্বস্তিপল্লিতে। দামোদরের জল বাড়ায় নৌকা-যাত্রীরা সমস্যায় পড়ছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement