কুনুর নদী। দুর্গাপুর-ফরিদপুর এলাকায়। —নিজস্ব চিত্র।
কুনুর নদী বয়ে গিয়েছে দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের বিস্তীর্ণ অংশ দিয়ে। পলি ও নোংরা জমে জমে নদী এখন রূপ নিয়েছে নালার। ফলে, বর্ষায় যেমন দুকূল ছাপিয়ে যায়। তেমনই বছরের অন্য সময়ে জল থাকে না। তখন নদী কোনও কাজে আসে না বলে জানালেন স্থানীয় বাসিন্দারা। নদীটি সংস্কারের দাবি তুলেছেন আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা।
অবিলম্বে কুনুর সংস্কারের দাবিতে সরব হয়েছে ‘কুনুর নদী বাঁচাও সংগ্রাম সমিতি’। আজ, বৃহস্পতিবার নদী সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবিতে সমিতির তরফে কালীকাপুর সতীঘাট এলাকায় সভার ডাক দেওয়া হয়েছে।
কুনুর নদীর উৎসস্থল পশ্চিম বর্ধমানের উখড়ার কাছে ঝাঁঝরা গ্রাম। সেখান থেকে দুর্গাপুর-ফরিদপুর, কাঁকসা, আউশগ্রাম, মঙ্গলকোট, এই চারটি থানা এলাকার মোট ১১২ কিলোমিটার এলাকা দিয়ে বয়ে গিয়েছে নদীটি। মঙ্গলকোটের কোগ্রামে অজয়ের সঙ্গে মিশেছে। ফি বছর বর্ষা এলেই চিন্তা বাড়ে নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের। তাঁরা জানান, পলি জমেছে। জনবসতি বাড়ার কারণে নদীর সহযোগী নালাগুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। নদীতে নোংরা আবর্জনা ফেলার প্রবণতাও আছে বলে অভিযোগ একাংশ বাসিন্দার। সব মিলিয়ে নদীটি মজে গিয়েছে।
দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের কালীকাপুর, প্রতাপপুর, খাটগোড়িয়া, বড়গোড়িয়া, কাঁটাবেড়িয়া, ধবনী, লবণাপাড়া প্রভৃতি গ্রামের ভিতর দিয়ে গিয়েছে কুনুর নদী। এলাকাবাসীর অভিযোগ, নদী সংস্কার না হওয়ায়, গভীরতা কমেছে। ফলে, বর্ষায় চাষাবাদ নষ্ট হয়। আবার বছরের অন্য সময়ে উল্টো চিত্র। তাঁদের দাবি, নদীটি সংস্কার করে তার স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনা হোক।
বাসিন্দারা জানান, এই ব্লকের ভিতর দিয়ে যাওয়া টুমনি নদীতে বাঁধ দিয়ে চেকড্যাম তৈরি করে, বিঘার পর বিঘা জমি চাষযোগ্য করে তোলা হয়েছে গৌরবাজার পঞ্চায়েত এলাকায়। এমনকি, গ্রীষ্মে বোরো ধানের চাষও হচ্ছে সেখানে। তাই কুনুরেরও উপযুক্ত সংস্কার করা গেলে, সেভাবেই বিঘার পর বিঘা জমি চাষযোগ্য হয়ে উঠবে। তাঁদের আশঙ্কা, এখনই কুনুর নদী সংস্কার না করা গেলে নদীটির অস্তিত্ব হারাবে।
কুনুর নদী বাঁচাও সংগ্রাম সমিতির তরফে সুজন সূত্রধর বলেন, “অবিলম্বে নদী সংস্কার করতে হবে। তা না হলে নদীর ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে পড়বে।” তাঁর দাবি, “তা ছাড়া একটি বেসরকারি গ্যাস সংস্থার বর্জ্য জল বছরের পর বছর ধরে নদীতে ফেলে। ফলে, নদীর জল দূষিত হচ্ছে। সেটা বন্ধ করতেই হবে।” যদিও ওই গ্যাস সংস্থার দাবি, বর্জ্য জল পরিশুদ্ধ করে, তার পরেই তা নদীতে ফেলা হয়।
স্থানীয় জেলা পরিষদের সদস্য সুজিত মুখোপাধ্যায় বলেন, “কুনুর নদী সংস্কারের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার জন্য সেচ দফতরের কাছে আর্জি জানানো হবে।”