বিক্ষোভ বিজেপির। নিজস্ব চিত্র
সমবায়ে জমানো টাকা না পাওয়ার অভিযোগে সরব হয়েছেন পূর্ব বর্ধমানের কালনা ২ ব্লক মার্কেটিং সোসাইটির গ্রাহকেরা। বুধবার সেনেরডাঙা এলাকায় ওই গ্রাহকদের নিয়ে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পালের অভিযোগ, ‘‘সমবায়ের ব্যাঙ্কে রাখা প্রায় ৪৫ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। বিপাকে পড়েছেন গ্রামের বহু গরিব পরিবার।’’ কালনা ২ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সহ সভাপতি তথা সমবায়ের সম্পাদক সুভাষ ঘোষ এতে জড়িত বলেও তাঁর অভিযোগ। যদিও অভিযোগ মানেননি সুভাষবাবু। তাঁর পাল্টা দাবি, বাজার গরম করতে বিরোধীরা অনেক কথা বলছেন। সমবায় গ্রাহকদের বকেয়া টাকা মেটানোর চেষ্টা করছে।
এই ব্লকের পুরনো সমবায় সমিতিগুলির মধ্যে একটি এই সমবায়। সমিতির দু’টি ব্যাঙ্কের শাখা রয়েছে সেনেরডাঙা এবং নেপাকুলি এলাকায়। গ্রাহকেরা সেভিংস অ্যাকাউন্টে টাকা রাখতেন সেখানে। তবে দু’টি শাখাই আপাতত বন্ধ। এ দিন কর্মসূচিতে পাসবই নিয়ে হাজির হয়েছিলেন বেশ কিছু গ্রাহক। প্রভাস কর্মকার নামে এক জন বলেন, ‘‘আমার সমবায় ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে ৩৬ হাজার ৫০০ টাকা রয়েছে। লকডাউনের পর থেকে বহু বার টাকা তুলতে চেয়েও পাইনি।’’ আর এক গ্রাহক প্রশান্ত মালিকের দাবি, ‘‘অ্যাকাউন্টে থাকা ৭০ হাজার টাকার মধ্যে অল্প অল্প করে ৩৫ হাজার টাকা পেয়েছি। বাকি টাকা কী ভাবে পাব তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি।’’
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৫ সালে কালনা ২ ব্লক মার্কেটিং সোসাইটিতে ক্ষমতায় আসে তারা। তখনই প্রায় দেড় কোটি টাকা লোকসানে চলছিল সমবায়টি। সমবায়ের যে হিমঘর রয়েছে তার পরিকাঠামো উন্নতিতে খরচ করা হয়েছে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা। হিমঘরে দু’লক্ষ বস্তা আলু রাখা যায়। তবে গত দুবছরে এক বার ৪৪ হাজার এবং আর এক বার এক লক্ষ বস্তা আলু রাখা গিয়েছে। অথচ, হিমঘর চালাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হয়েছে। সব মিলিয়ে পুঁজিতে টান পড়ায় সমবায়কে সেভিংস অ্যাকাউন্টে রাখা টাকায় হাত দিতে হয়েছে, দাবি তাঁদের। ব্লক তৃণমূল সভাপতি প্রণব রায়ের দাবি, বাম আমলেই সেভিংস অ্যাকাউন্টের অনেক টাকা ভেঙে ফেলা হয়। এ ছাড়া ২০১৭ সালে আলুর বন্ড বন্ধক রেখে অনেকে ঋণ নেন। তাঁদের মধ্যে অনেক চাষি ঋণ শোধ করেননি বলেও সমবায়ের দাবি।
এ দিন বেলা ১১টা থেকে বিজেপির মহিলা মোর্চা মঞ্চ বেঁধে বিক্ষোভ শুরু করে। দুপুর ২টো নাগাদ কালনা-বৈঁচি রাস্তা অবরোধ করা হয়। অগ্নিমিত্রার দাবি, সমবায়ের দু’টি শাখায় প্রায় তিন হাজার মানুষ টাকা রেখেছিলেন। জমা রাখা প্রায় ৪৫ লক্ষ টাকা ‘লুট’ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘গরিব মা-বোনেদের টাকা সমবায়ের সম্পাদক ও তৃণমূলের লোকজনই আত্মসাৎ করেছেন।’’ যদিও সুভাষবাবু বলেন, ‘‘কঠিন পরিস্থিতিতেও আমরা ২৯ লক্ষ টাকা শোধ করেছি। গত দু’বছর হিমঘরে কম পরিমাণ আলু মজুত না হলে বাকি ধাক্কাও অনেকটা সামলে নেওয়া যেত।’’ তাঁর দাবি, সমবায়ের বোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছর অগস্টে। গ্রাহকদের বকেয়া ২৫-৩০ লক্ষ টাকা মেটানোর বিষয়টি দেখার জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে রাজ্যের সমবায় মন্ত্রীকে।