গাঁধীমোড় ময়দানে শনিবার। নিজস্ব চিত্র
বছরভরের ‘সংযম’ এক নিমেষেই শেষ! অবশ্য তা নিয়ে খুব একটা হাপিত্যেশ নেই। দু’একটা দিন একটু নিয়ম মানলেই পরিস্থিতি ফের পুরনো অবস্থায় ফিরে আসবে। এখন তো জিভের সাধ মিটুক! চোখের সামনে হরেক রকমের মিষ্টি দেখে লোভ সামলাতে পারলেন না সুলতা চট্টোপাধ্যায়রা, তুষার নাথ, মীরা সরকাররা।
দুর্গাপুরের গাঁধীমোড় ময়দানে শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে মিষ্টি উৎসব। বিভিন্ন জায়গা থেকে মিষ্টি ব্যবসায়ীরা তাঁদের সামগ্রী নিয়ে এসেছেন এখানে। কনকনে শীত উপেক্ষা করে মেলায় ভিড় জমাচ্ছেন মিষ্টিপ্রেমীরা। তবে মিষ্টি উৎসবের শুরু হয়েছে ২০১৪ সালে। উদ্যোক্তা, পুরসভার তৎকালীন কাউন্সিলর বর্তমানে ডেপুটি মেয়র অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়। এই শহরের মিষ্টিপ্রেমীদের কথায়, শহরের নামী-দামি দোকানের মিষ্টি তো নিয়মিতই চেখে দেখা যায়। কিন্তু শহরে বসেই যদি জয়নগরের মোয়া, নবদ্বীপের দই, কাটোয়ার পান্তুয়া বা কৃষ্ণনগরের সরভাজা পাওয়া যায় তাহলে মন্দ কী! প্রথম বছরেই ভিড় দেখে অনিন্দিতাদেবী সিদ্ধান্ত নেন, বছর বছর মিষ্টি উৎসবের আয়োজন করা হবে। তখন থেকে প্রতি বছর জানুয়ারির শুরুতে এই উৎসবের আয়োজন হচ্ছে গাঁধী মোড় ময়দানে।
এ বছর শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে মিষ্টি মেলা। উদ্বোধন করেন পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারি। ‘গীতাঞ্জলি’ নামে এক সংস্থা মেলার আয়োজক। মেলা চলবে সোমবার পর্যন্ত। দুর্গাপুরের দোকান ছাড়াও রয়েছে পানাগড়, বর্ধমান, নবদ্বীপ, কাটোয়া-সহ নানা জায়গার দোকান। সেই সব জায়গায় পাওয়া বিশেষ বিশেষ মিষ্টির স্টল সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। এ ছাড়া পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের পিঠে-পুলি, চাট, ফুচকা, চপ, সিঙাড়াও। ভিড় দেখে মনে হয়, এই মেলার জন্য যেন বছরভর অপেক্ষা করে থাকেন দুর্গাপুরের মানুষ।
শুধু দুর্গাপুর নয়, প্রবল ঠান্ডা উপেক্ষা করে পানাগড়, অন্ডাল প্রভৃতি জায়গা থেকেও অনেকে এসেছেন। আট থেকে আশি। বয়স যেন কোনও বাধাই নয়! সুলতাদেবী এসেছেন অন্ডাল থেকে। তাঁর বয়স ৩০ বছর হবে। জানালেন, গত দু’বছর ধরে তিনি এই মিষ্টি মেলায় নিয়মিত আসছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এখানে মিষ্টির সঙ্গে নোনতা জাতীয় খাবারও মিলছে। এ ছাড়াও খেজুর গুড়, ঘি-সহ নানা ধরনের জিনিস পাওয়া যায়। যেগুলি বাড়িতে নিয়ে যাওয়া যায়।’’ এ বছরও মিষ্টি মেলায় হরেক রকমের মিষ্টি খেয়ে খুশি প্রৌঢ়া মীরাদেবী।
কী বলছেন ব্যবসায়ীরা? সুকুমার মোদক নামে এক মিষ্টি ব্যবসায়ী এসেছেন বাঁকুড়ার বড়জোড়া থেকে। তিনি মন্ডা, সন্দেশ, গুড়, খেজুরের পসরা নিয়ে হাজির হয়েছেন এখানে। তাঁর কথায়, ‘‘এই প্রথম বছর এই মেলায় এসেছি। দু’দিনে ভালই বিক্রি হয়েছে। আরও দু’দিন ভাল কাটবে বলে আশা করছি।’’
শুধু কী মিষ্টি খাওয়ার আনন্দ! মিষ্টিসুখ নেওয়ার পাশাপাশি প্রতি সন্ধ্যায় রয়েছে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মজাও। নাচ, গান, আবৃত্তি, ক্যুইজ। সোমবার সমাপ্তি অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করার কথা শিল্পী মনোময় ভট্টাচার্যের। সব মিলিয়ে চার বছরে পা দেওয়া দুর্গাপুরের মিষ্টি মেলা বেশ জমেই উঠেছে।