আদালতে ধৃতেরা। নিজস্ব চিত্র
ভিড়ে ভরা আর্থিক সংস্থায় ঢুকে প্রায় ৩৬ কিলোগ্রাম সোনা লুঠ করে নিয়ে গিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। দুর্গাপুরের বেনাচিতির সেই ঘটনায় প্রায় সাড়ে চার বছর পরে ছয় অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করল আদালত।
২০১৩-এর ১ ফেব্রুয়ারি বেনাচিতির ভিড়িঙ্গিতে সোনার গয়না বন্ধক রেখে ঋণ দেওয়ার এক বেসরকারি আর্থিক সংস্থার অফিসে বিকেল সওয়া ৩টে নাগাদ ওই লুঠপাট হয়। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ভিতরে তখন গ্রাহকদের ভিড়। হঠাৎ এক দল দুষ্কৃতী আগ্নেয়াস্ত্র ও ভোজালি নিয়ে চড়াও হয়। একমাত্র নিরাপত্তারক্ষীর বন্দুক কেড়ে নিয়ে মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে চাবি আদায় করে তারা। ভল্ট খুলে সোনার গয়না, কয়েন, টাকা ভরে চম্পট দেয়। সিসিটিভি যন্ত্রটিও সঙ্গে নিয়ে যায় তারা। লুঠ হওয়া সোনার বাজারমূল্য হিসেব করে দেখা যায়, তা প্রায় ১২ কোটি টাকা। সঙ্গে লুঠ হয়েছিল আরও প্রায় ১১ লক্ষ টাকা নগদ।
সিআইডি-র সহযোগিতায় পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগ তদন্ত শুরু করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মুখঢাকা এক দুষ্কৃতী বাংলায় কথা বলছিল। বাকিরা হিন্দিতে। বয়স সকলেরই ৩০ বছরের আশপাশে। তদন্তের সূত্রে পুলিশ পৌঁছে যায় ঝাড়খণ্ডের মাওবাদী অধ্যুষিত বারোয়াড্ডায়। মাওবাদী এলাকায় অভিযান চালানোয় দক্ষ ঝাড়খণ্ডের প্রায় দেড়শো পুলিশকর্মী, ধানবাদের পুলিশ সুপার আর কে ধানকে সঙ্গে নিয়ে কমিশনারেটের তৎকালীন এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদব এবং তদন্তকারী অফিসার তীর্থেন্দু গঙ্গোপাধ্যায় ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে দশরথ মাহাতো নামে এক অভিযুক্তের বাড়িতে অভিযান চালান। দশরথ পালায়। তার স্ত্রী, শাশুড়ি ও দুই শ্যালককে গ্রেফতার করা হয়। বাড়ির উঠোনের মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করা কলসি থেকে প্রায় ৪ কেজি সোনা মেলে। ঘরের ভিতর থেকে পাওয়া যায় নগদ ৪,২২,২২০ টাকা। এছাড়া ডাকাতির ঘটনার পরের দু’দিনে ধানবাদের রাজগঞ্জ বাজার থেকে কেনা তিনটি টিভি, একটি রেফ্রিজারেটর, দু’টি মিউজিক সিস্টেম, ছ’টি ফ্যান ও বেশ কিছু জামাকাপড় উদ্ধার হয়। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দশরথের পাশের বাড়ি থেকে ধরা হয় আরও এক জনকে।
৬ ফেব্রুয়ারি রাতে ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ জেলার সিন্ধ্রি থেকে আরও দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, তদন্তে জানা গিয়েছে, দশরথ দীর্ঘদিন ধরে মোটরবাইক চুরিতে যুক্ত ছিল। ধানবাদ ও গয়ায় জেলে থাকাকালীন কয়েকজন দুষ্কৃতীর সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে ওঠে তার। সেই দলটিই হানা দেয় দুর্গাপুরে। পরে ওই দলের আরও সাত জনকে ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মোট ধৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১১। এ ছাড়া এক অভিযুক্ত পলাতক। ধৃতদের মধ্যে দশরথের স্ত্রী, শাশুড়ি ও এক আইনজীবীকে আদালত জামিনে মুক্তি দেয়। বাকিদের পাঠানো হয় জেল-হাজতে। তাদের মধ্যে এক জনের মৃত্যু হয়।
মঙ্গলবার দুর্গাপুরের এডিজে অমলেন্দু ভৌমিক দশ জনের মধ্যে চার জনকে বেকসুর খালাস করেন। দোষী সাব্যস্ত করা হয় দশরথ মাহাতো, উত্তম মাহাতো, বাবু রাজ ওরফে সিদ্ধার্থ সিংহ, সুবোধ মাহাতো, নন্দলাল মাহাতো ও রঞ্জিতকুমার গিরিকে। উত্তমের বিরুদ্ধে বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশাতেও ব্যাঙ্ক ডাকাতি-সহ নানা মামলা রয়েছে। বৃহস্পতিবার সাজা ঘোষণা করবে আদালত।