ধৃতদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে পূর্বস্থলী থানার পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।
অতিরিক্ত মালবোঝাই গাড়ি ধরতে গিয়ে মোটর ভেহিকল দফতরের আধিকারিকদের লক্ষ্য করে গুলিচালনার অভিযোগ উঠল দু’জন দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে। গুলি গাড়ি ভেদ না করায় রক্ষা পেয়ে যান আধিকারিকেরা। তবে এই হামলার অভিযোগে বুধবার রাতে পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলী থেকে দু’জন দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, বুধবার গভীর রাতে এসটিকেকে রোডে পূর্বস্থলী বড়ডাঙ্গা সংলগ্ন এলাকায় দুষ্কৃতীদের হামলার শিকার হন মোটর ভেহিকল এনফোর্সমেন্ট (এমভিআই) আধিকারিকেরা। এই অভিযোগে ধৃতদের নাম শান্তনু মজুমদার এবং পিকলু রায়। তাঁদের এক জনের বাড়ি পূর্বস্থলীর কলেজ পাড়ায়। অন্য জন পারুলিয়া এলাকার বাসিন্দা। ধৃতদের ব্যবহৃত একটি দামি চারচাকা গাড়ি বাজেয়াপ্ত করে গুলিচালনার কারণ নিয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। তদন্তে নেমে একটি গুলির খোল উদ্ধার করলেও আগ্নেয়াস্ত্রটির হদিস পায়নি পুলিশ।
পুলিশ এবং এমভিআই দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কালনার এমভিআই আধিকারিক প্রীতম কর্মকার এবং অভিজিৎ ঘোষের নেতৃত্বে একটি দল বুধবার গভীর রাতে ওভারলোড করা গাড়ি ধরার অভিযানে নেমেছিলেন। নাকা চেকিং-সহ রুটিনমাফিক অভিযানের সময় একটি চারচাকা গাড়িতে চড়ে কাটোয়ার দিক থেকে পূর্বস্থলীর দিকে যাচ্ছিলেন ওই আধিকারিকেরা। পথে বটডাঙ্গার কাছে একটি গাড়ি থেকে দুষ্কৃতীরা ওই আধিকারিকদের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে উধাও হয়ে যান বলে অভিযোগ। এআরটিও সৌমেন নন্দী বলেন, ‘‘মোটর ভেহিকল এনফোর্সমেন্টের আধিকারিকেরা বুধবার রাতে নাকা চেকিং এবং রুটিন চেক করছিলেন। গাড়িতে চালক, দুই পুলিশ কনস্টেবল ও আধিকারিক মিলিয়ে ৬ জন ছিলেন। আচমকাই সামনের দিক থেকে ওই আধিকারিকদের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে উধাও হয়ে যান দুষ্কৃতীরা। সেই গুলি গাড়ির সামনের কাচের নীচে ধাতব অংশে লাগলে সেখানে গর্ত হয়ে যায়। পাশাপাশি, আরও গুলি চালানোর শব্দ পান বলে আধিকারিকেরা জানিয়েছেন। এর কিছু ক্ষণের মধ্যেই আরও একটি চারচাকা গাড়ি এমভিআই আধিকারিকদের গাড়ির পিছু নেয়।’’ ওভারলোড গাড়ি ধরতে বার হওয়া এমভিআই আধিকারিক অভিজিৎ ঘোষ বলেন, “বুধবার রাতে রুটিন চেকিংয়ে বেরিয়ে ছিলাম আমরা। রাত দেড়টা নাগাদ আচমকা একটি চারচাকা গাড়ি থেকে আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে কাটোয়ার দিকে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। গুলি গাড়ির বডিতে লাগায় আমরা রক্ষা পেয়ে যাই। এর খানিক পরেই দেখি, আর একটি চারচাকা গাড়ি আমাদের গাড়ির পিছুও নিয়েছে।’’ এই হামলার ঘটনার খবর পেয়ে পিছুধাওয়া করে নম্বরবিহীন একটি দামি চারচাকা গাড়ি ও গাড়িতে সওয়ার থাকা দুই দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করেছে পূর্বস্থলী থানার পুলিশ।
এআরটিও সৌমেন নন্দী জানিয়েছেন, এই হামলার ঘটনায় পূর্বস্থলী থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন তাঁরা। পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ করে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ধৃত শান্তনুকে কালনা আদালতে পেশ করে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানায় পুলিশ। ধৃতকে ৫ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, শান্তনুর কয়েকটি ডাম্পার রয়েছে। বালি, পাথর সরবরাহের সে সব ডাম্পার ব্যবহার করেন তিনি। যদিও নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন শান্তনু। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ধ্রুব দাস বলেন, “এমভিআইয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার এক জনকে আদালতে হাজির করে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়। কী কারণে গুলি চালানো হল, তার তদন্ত শুরু হয়েছে।” যদিও কোন গাড়ি থেকে গুলি ছোড়া হয়েছিল, তা এখনও পুলিশের কাছে স্পষ্ট নয়। ঘটনাস্থল ও তার সংলগ্ন এলাকার সিসি ফুটেজ খতিয়ে দেখছে পূর্বস্থলী থানার পুলিশ।