West Bardhaman Submerged

জল ঢুকল বসতিতে, কেন্দ্রকে দোষ মন্ত্রীর

বরাকরের কবরস্থান মহল্লা, ডায়মন্ড গ্রাউন্ড, ফাঁড়ি রোড-সহ কয়েকটি এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। প্রায় ২০টি পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৭:৩২
Share:

বানভাসি পরিস্থিতি দুর্গাপুরের মানাচর এলাকায়। ছবি: বিশ্বনাথ মশান।

ডিভিসি-র জলাধার থেকে বিপুল পরিমাণ জল ছাড়ার ফলে প্লাবিত হল পশ্চিম বর্ধমানের বেশ কিছু এলাকা। মাইথন জলাধার থেকে ছাড়া জলে বরাকর নদ লাগোয়া কিছু এলাকা জলমগ্ন হয়েছে। গৃহহীন হয়েছে কয়েকটি পরিবার। তাদের ত্রাণ শিবিরে আনা হয়েছে। দুর্গাপুর লাগোয়া বাঁকুড়া জেলার মানাচর এলাকাও জলমগ্ন। রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক বুধবার দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে বাসিন্দাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। রাজ্যকে না জানিয়ে জল ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হন তিনি। মন্ত্রীর অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি বিজেপি নেতৃত্বের।

Advertisement

বরাকরের কবরস্থান মহল্লা, ডায়মন্ড গ্রাউন্ড, ফাঁড়ি রোড-সহ কয়েকটি এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। প্রায় ২০টি পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতি আগে কখনও হয়নি বলে জানান বাসিন্দারা। তাই তাঁরা সতর্ক ছিলেন না। মঙ্গলবার বিকেল থেকে এলাকায় জল ঢুকতে শুরু করে। বাসিন্দারা জানান, ঘরের নানা সামগ্রী নষ্ট হয়ে গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ সাজাদ হুসেনের কথায়, ‘‘এ ভাবে জল ঢুকতে আগে কখনও দেখিনি। জিনিসপত্র কিছুটা সরাতে পেরেছি। অনেক কিছুই জলে নষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’ মহম্মদ ফিরদৌস বলেন, ‘‘সোমবার সকাল পর্যন্ত টানা বৃষ্টি হওয়ায় আগে থেকেই এলাকায় জল জমে ছিল। জলাধারের জল ছাড়ার ফলে অবস্থা আরও শোচনীয় হয়েছে।’’

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে স্থানীয় একটি বালিকা বিদ্যালয়ে অস্থায়ী ত্রাণ শিবির করে তুলে আনার ব্যবস্থা হয়েছে। স্থানীয় ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডের পুর প্রতিনিধি টুম্পা চৌধুরী বলেন, ‘‘প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি, তবে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ত্রাণ শিবিরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’ মঙ্গলবার স্কুল ছুটি থাকায় সমস্যা হয়নি। তবে বুধবার স্কুল খোলা ছিল। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শ্রাবণী রায় বলেন, ‘‘পঠনপাঠনে সামান্য সমস্য়া হলেও, প্রাকৃতিক বিপর্যের মতো বিষয়। তাই গৃহহীনদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’

Advertisement

এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ, নিকাশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার কারণেই পরিস্থিতি এতটা খারাপ হয়েছে। নর্দমাগুলি নিয়মিত সাফাই হয় না। যেখানে সেখানে আবর্জনার স্তুপ। এই অবস্থায়, জল নিজের মতো বয়ে যেতে পারছে না। যদিও তা মানতে চাননি পুরসভার কর্তারা। তাঁদের পাল্টা দাবি, এলাকায় নিয়মিত সাফাই ও নিকাশির ব্যবস্থা হয়। নদ লাগোয়া এলাকার ফাঁকা সরকারি জমি দখল করে বাসস্থান গড়া হয়েছে। ফলে, জল বেরোনোর রাস্তাই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সে কারণেই জল ঢুকছে এলাকায়।

দামোদরের জলে প্লাবিত হয়েছে দুর্গাপুর লাগোয়া বাঁকুড়ার বড়জোড়ার ঘুটগড়িয়া পঞ্চায়েতের সীতারামপুর, মাঝের মানা, বরিশালপাড়া-সহ বেশ কিছু এলাকা। এ দিন সকালে বড়জোড়ার বিধায়ক অলোক মুখোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে ওই এলাকা পরিদর্শনে আসেন মন্ত্রী মলয় ঘটক। তিনি বাসিন্দাদের জানান, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে খোঁজ নিতে এসেছেন। প্রশাসনের তরফে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কারও কোনও সমস্যা রয়েছে কি না, তা খোঁজ নেন মন্ত্রী। তিনি জানান, নিচু এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে যুব আবাসে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বন্যার জন্য কেন্দ্রকে দায়ী করে মন্ত্রী বলেন, “রাজ্যকে না জানিয়ে লক্ষ লক্ষ কিউসেক জল ছেড়ে দেওয়া হয়। দামোদরের আশপাশের বিশাল এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়।”

দুর্গাপুর পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের পাল্টা দাবি, “কেন্দ্রের দেওয়া অর্থে দুর্গাপুর ব্যারাজে ‘স্কাডা সেন্টার’ চালু হয়েছে। সেচ দফতরের তত্ত্বাবধানেই চলছে সেই সেন্টার। ফলে, জল ছাড়ার পুরো বিষয় সম্পর্কে এখন অবগত থাকে সেচ দফতর।” তাঁর আরও দাবি, ‘‘যখনই বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়, মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রকে দোষ দিয়ে দায় সারতে চান। বাঁধ তৈরির টাকা আসে কেন্দ্র থেকে। বাঁধ তৈরি করা হয় কি? মলয় ঘটক মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন।”

দামোদরের জলে জলমগ্ন হয়েছে কাঁকসার সিলামপুরের কিছু বাড়ি এবং অনেক জমিও। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে দামোদরে জল আরও বাড়তে থাকায়, আধ কিলোমিটার দূরের জনবসতি পর্যন্ত জল উঠে আসে। প্রায় ১২টি বাড়িতে জল ঢুকে যায়। একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রেও জল ঢোকে। বাসিন্দাদের দাবি, এলাকার প্রায় ৫০০ বিঘা ধান জমি জলের তলায় চলে গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা খাদেম মোহর আলি খান জানান, প্রশাসনের তরফে তড়িঘড়ি বাসিন্দাদের অন্যত্র সরানোর ব্যবস্থা করা হয়।

কাঁকসা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ভবানী ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘রাতেই এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। জলমগ্ন বাসিন্দাদের স্থানীয় হাই স্কুলে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির এখনও খবর নেই।’’ বাসিন্দারা জানান, বুধবার বিকেলের পর থেকে কিছুটা হলেও জল নেমেছে। বুদবুদের নস্করবাঁধ, ভরতপুরেও নদের পার্শ্ববর্তী জমি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। কসবা মানা এলাকাতেও বহু জায়গায় জল জমেছে বলে জানা গিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement