রোজই থামছে কোনও না কোনও শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন। বর্ধমান স্টেশনে পরিযায়ী শ্রমিকদের ভিড়। নিজস্ব চিত্র
একের পরে এক শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন দাঁড়াচ্ছে বর্ধমান স্টেশনে। হু হু করে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলার যাত্রীরা নামছেন। কিন্তু খাবার থেকে শৌচাগার, কোনওটাই পর্যাপ্ত নয় বলে অভিযোগ তাঁদের একাংশের। শ্রমিকদের দাবি, ট্রেনে নামার পর থেকে বাসে ওঠা পর্যন্ত কম পক্ষে চার ঘণ্টা সময় লাগছে। শুক্রবার সকালে এ নিয়ে শ্রমিকদের একাংশ বিক্ষোভও দেখান। দুপুরে জেলা প্রশাসনের কর্তারা স্টেশনে গিয়ে, বাসে ওঠার ব্যবস্থা কী ভাবে আরও তাড়াতাড়ি করা যায় কিংবা স্টেশন চত্বরেই পরিযায়ীদের আরও ভাল করে বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ কী ভাবে দেওয়া যায়, তা খতিয়ে দেখেন।
স্টেশনে দাঁড়িয়ে জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতী বলেন, “তিন দিন ধরে ট্রেন আসছে। নির্ধরিত সূচির মধ্যে তো বটেই সূচির বাইরেও ট্রেন দাঁড়িয়ে পড়ছে। সময়েরও ঠিক নেই। হঠাৎ করে এক হাজার পরিযায়ী শ্রমিক নেমে পড়লে, আমাদের কী করা উচিত সেটা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে সুবিধা-অসুবিধার কথাও জেনেছি।’’
জেলা প্রশাসনের দাবি, বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে শুক্রবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজার পরিযায়ী শ্রমিক বর্ধমান স্টেশনে নেমেছেন। তার মধ্যে জেলার বাসিন্দা ন’শোর কাছাকাছি। তাঁদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেওয়ার জন্য দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণ নিগম (এসবিএসটিসি) ও বেসরকারি মিলিয়ে ৬০টির মতো বাসের ব্যবস্থা করেছিল জেলা পরিবহণ দফতর। এ দিন সকালে ওই শ্রমিকদের একাংশ অভিযোগ করেন, তিন দিন ধরে ট্রেনে খাবার সে ভাবে জোটেনি। বর্ধমান স্টেশনে এসেও খাবার মেলেনি। গন্তব্যস্থলে যাওয়ার জন্য বাস ধরতেও প্রচুর সময় লাগছে। বিশ্রামের জায়গা নেই, প্ল্যাটফর্মেও বেশি ক্ষণ বসতে দেওয়া হচ্ছে না বলে তাঁদের দাবি। পুলিশের সঙ্গে ‘বচসা’ও হয় কয়েকজনের। দুপুরেও একই অভিযোগ করেন পরিযায়ীদের একাংশ।
জেলায় করোনা
মোট আক্রান্ত ৭৪
২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৫
• ভাতার ব্লক: ২
• বর্ধমান ২ ব্লক: ১
• কেতুগ্রাম ১ ব্লক: ১
• বর্ধমান শহর: ১
**শুধু গত ২৪ ঘণ্টার হিসেব
(সূত্র: জেলা স্বাস্থ্য দফতর)
তাঁদের অভিযোগ, ট্রেন থেকে নামার পরে অন্তত চার ঘণ্টা সময় লাগছে বাস পেতে। পর্যাপ্ত খাবার, পানীয় জল কিংবা বিশ্রামের জায়গা না থাকায় ধৈর্যচ্যুতি ঘটছে অনেকেরই। দক্ষিণ ২৪ পরগনার দুই মহিলার অভিযোগ, “কেরল থেকে আসছি। ওড়িশা থেকে কোনও খাবার পাইনি। চিঁড়ে খেয়ে কাটাতে হয়েছে। বর্ধমান স্টেশনে নামার পরে, বিস্কুট দেওয়া হয়েছে। শৌচাগার পর্যন্ত যেতে পারিনি!” রাজস্থান থেকে আসা পূর্বস্থলীর এক পরিযায়ী শ্রমিকের কথায়, “চরম অব্যবস্থার শিকার হচ্ছি আমরা।’’ পুণেতে চাকরি করতে গিয়েছিলেন হোটেল ম্যানেজমেন্ট পাশ করা নবদ্বীপের এক ছাত্রী। তাঁর কথায়, “চাকরিতে ঢোকার পরেই লকডাউন। দু’মাস মাইনে পাইনি। খাবারও মিলছিল না। ট্রেনে করে বর্ধমানে এসেছি। কখন বাড়ি ফিরব বুঝতে পারছি না।’’
এ দিন বর্ধমান স্টেশনে শ্রমিকদের ভিড়ের একটি ভিডিয়ো দিয়ে বিষয়টি নিয়ে টুইট করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বিজেপির জেলা সাংগঠনিক সভাপতি (বর্ধমান সদর) সন্দীপ নন্দীরও দাবি, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকেরা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে আছেন। মাস্ক নেই। প্রশাসনের তরফে খাবার, শৌচাগারের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে না। সরকার কিছুই করছে না।’’
জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “সুষ্ঠু ভাবে যাত্রীরা যাতে দাঁড়াতে পারেন, বাস ধরতে পারেন তার জন্যে প্রতিটি জেলার ক্ষেত্রে আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে। ডিএসপি পদমর্যাদার অফিসাররা প্রক্রিয়াটা নিয়ন্ত্রণ করছেন। প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’’
এ দিন কর্তারা ঠিক করেছেন, বাসের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য এসবিএসটিসির সঙ্গে কথা বলা হবে। স্টেশনের শৌচাগার ব্যবহার করতে দিতে হবে। এ ছাড়া, আরও একটি বড় করে আচ্ছাদনের ব্যবস্থা, কমিউনিটি কিচেন করার প্রস্তাবও নেওয়া হয়েছে।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) প্র ণব রায় বলেন, “স্ক্রিনিং বাড়ানোর জন্য আরও কর্মী নিয়োগ করা হবে।’’