সরকারি বরাদ্দ না মেলায় কুলটি শিক্ষা চক্রের স্কুলগুলি মিড-ডে মিল দিতে সমস্যায় পড়েছে। পড়ুয়াদের মুখে খাবার তুলে দিতে হিমসিম হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ শিক্ষকদের। তাঁদের দাবি, প্রশাসনের আধিকারিকদের সমস্যার কথা জানিয়েও সুরাহা হচ্ছে না। ফলে, প্রায় ১৭ হাজার পড়ুয়া স্কুলে অভুক্ত থাকার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যদিও প্রশাসনের কর্তারা জানান, সমস্যা মেটানোর উদ্যোগ শুরু হয়েছে।
কুলটি শিক্ষাচক্রে প্রায় ৮৪টি প্রাথমিক স্কুল আছে। শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ১৭ হাজার। গত এপ্রিল থেকে এই স্কুলগুলিতে মিড-ডে মিলের জন্য বরাদ্দ সরকারি অনুদান আসছে না। তবে প্রায় পাঁচ মাসের অনুদান বকেয়া থাকা সত্ত্বেও শিক্ষকেরা পড়ুয়াদের খাবার দেওয়া বন্ধ করেননি। প্রধান শিক্ষকেরা জানান, প্রতি মাসে রেশন থেকে চাল আসছে। কিন্তু সবজি, তেল, নুন, মশলা বা জ্বালানি কেনার টাকা থাকছে না। কয়েক মাস ধরে শিক্ষকেরাই গাঁটের কড়ি খরচ করে সেই সব খরচ মেটাচ্ছেন বলে জানান। তাঁদের দাবি, অনেক সময়ে দোকানে বলে ধারে এ সব আনতে হচ্ছে। কিন্তু আর চালানো সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষকদের একটি বড় অংশই এ বার হাত গুটিয়ে নিতে শুরু করেছেন। ধারে জিনিস দিতে বেঁকে বসেছেন দোকানের মালিকেরাও।
শিক্ষকেরা জানান, দুপুরে খাবারের অপেক্ষায় থাকা পড়ুয়াদের মুখ দেখে বসে থাকতে পারছেন না তাঁরা। ফলে, এখন উভয়সঙ্কটে পড়েছেন। এমনই এক প্রধান শিক্ষক তীর্থ আইচ বলেন, ‘‘বরাদ্দ আসছে না বলে তো কষ্ট হচ্ছেই। কিন্তু তার থেকেও বেশি কষ্ট ছাত্রছাত্রীদের মুখগুলো দেখে। ওরা আশা করে থাকে, দুপুরে খেতে দেওয়া হবে। সেটা বন্ধ করি কী ভাবে!’’ শুধু তাই নয়, যাঁরা রান্না করেন সেই স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদেরও চার মাসের মজুরি বাকি। বকেয়া না পেলে তাঁরাও আর রান্না করতে পারবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রধান শিক্ষকেরা তাঁদের এই সমস্যার কথা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের কাছে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। কিন্তু কোনও তরফেই হেলদোল দেখা যায়নি বলে অভিযোগ। নানা শিক্ষক সংগঠনের তরফেও অবিলম্বে সরকারি বরাদ্দ পাঠানোর দাবি করা হয়েছে। এবিটিএ-র কুলটি শিক্ষাচক্রের সম্পাদক রাধাগোবিন্দ রায় বলেন, ‘‘আমরা গত দু’মাস ধরে বকেয়া মেটানোর অনুরোধ করে আসছি। কিন্তু তা কানেই তোলা হচ্ছে না!’’ পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাইমারি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের কুলটির সম্পাদক সনৎ মাজির বক্তব্য, ‘‘আমরা এই সমস্যার কথা জানিয়ে স্কুল পরিদর্শককে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করেছি।’’ ‘পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতি’র সম্পাদক অনিমেষ মাজি দাবি করেন, ‘‘এই সমস্যায় বিপদে পড়ে গিয়েছি। পুরসভাকে উদ্যোগী হতে হবে।’’
কুলটি শিক্ষাচক্রের স্কুল পরিদর্শক রাজেন্দ্রপ্রসাদ মণ্ডল বলেন, ‘‘সদ্য এখানে কাজে যোগ দিয়েছি। সমস্যার কথা শুনেই আধিকারিকদের জানিয়েছি। আশা করি, দ্রুত সমাধান হবে।’’ আসানসোলের মহকুমাশাসক প্রলয় রায়চৌধুরী আশ্বাস দেন, এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে।