প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় ফিরে যাচ্ছেন দুই ব্যক্তি, পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমানার পশ্চিম বর্ধমানের বরাকরে। নিজস্ব চিত্র।
সোমবার সকাল ১০টা। স্থান পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমানার বরাকরের ডুবুরডিহি চেকপোস্ট। ২ নম্বর জতীয় সড়কের মাঝখানে ব্যারিকেড বসিয়ে বাংলামুখী যানবাহন পরীক্ষা করছেন আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের কর্তব্যরত পুলিশকর্মী ও অফিসারেরা। আগন্তুকদের যাবতীয় কিছু খাতায় লিখে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। অবশ্য তাঁদের ‘আরটিপিসিআর’ নেগেটিভ রিপোর্ট দেখা হচ্ছে। না থাকলে ফেরতও পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
পুলিশ কমিশনার অজয় ঠাকুর বলেন, ‘‘সীমানা দিয়ে প্রবেশের ক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশ পুরোপুরি মেনে চলা হচ্ছে।’’
করোনা নিয়ন্ত্রণে রাজ্য সরকার নতুন করে নির্দিশিকা জারি করেছে। সরকারি তরফে জানানো হয়েছে, ভিন্ রাজ্য থেকে এই রাজ্যে প্রবেশের সময় প্রত্যেককে ‘আরটিপিসিআর’ নেগেটিভ রিপোর্ট দেখিয়ে ঢুকতে হবে। এই নির্দেশিকা জারি হতেই সীমানা এলাকায় কড়াকড়ি বাড়িয়েছে পুলিশ। রবিবার ছিল সেই নির্দেশিকা জারির প্রথম দিন। এ দিনই কমিশনারেটের ডিসিপি আনন্দ রায় বরাকরের ডুবুরডিহি সীমানায় গিয়ে পুলিশকর্মী ও অফিসারদের তাঁদের কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন। সোমবার সকালে ডুবুরডিহি ও বেগুনিয়া চেক পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, প্রখর রৌদ্রে পুলিশকর্মী, আধিকারিকেরা দাঁড়িয়ে নিজেদের দায়িত্ব পালন করছেন। পঞ্জাব থেকে একটি পণ্যবোঝাই ট্রাক ডানকুনি যাওয়ার জন্য সীমানায় এসে দাঁড়ায়। পরে চালকের ‘আরটিপিসিআর’ শংসাপত্র দেখা হয়। ট্রাকচালক সুখবিন্দর সিংহ বলেন, ‘‘আরটিপিসিআর শংসাপত্র নেই। তবে করোনা টিকার দু’টি ডোজ় নেওয়া আছে।’’ সেই সংক্রান্ত সরকারি শংসাপত্র দেখে তাঁকে জেলায় ঢুকতে দেওয়া হয়। উত্তরপ্রদেশ থেকে পণ্য নিয়ে হুগলি যাচ্ছিলেন ট্রাকচালক ভাস্কর মিশ্র। কিন্তু তাঁর কাছে আরটিপিসিআর বা করোনা টিকার একটি ডোজ় নিয়েছেন এমন কোনও শংসাপত্র ছিল না। তখন পুলিশকর্মীরা তাঁকে চেকপোস্ট লাগোয়া ট্রাক-বে-তে দাঁড় করিয়ে রাখেন। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে তাঁকে সীমানা পার করার অনুমতি দেয় পুলিশ।
এ দিকে, কোডারমা থেকে রানিগঞ্জে আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছিলেন পৃথ্বীশ কুমার। পুলিশ তাঁকে আটকালে তিনি নিজের আরটিপিসিআর নেগেটিভ শংসাপত্র দেখান। তবে তাঁর চালকের কাছে তেমন কোনও শংসাপত্র না থাকায় পুলিশ তাঁকে ফেরচত পাঠিয়ে দেয়।
এমনই কড়াকড়ি দেখা গিয়েছে বেগুনিয়া চেকপোস্টেও। এই চেকপোস্টের অপরপ্রান্তে ঝাড়খণ্ডের চিরকুন্ডা শহর। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, চিরকুন্ডা, কুমারডুবি, নিরশা থেকে নিয়মিত যাত্রী নিয়ে অটো বরাকর, কুলটি, ডিসেরগড়ের বিস্তীর্ণ এলাকায় যাতায়াত করে। রবিবার থেকেই এই চেকপোস্টে গার্ডরেল বসিয়ে অটো যাতায়াত পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সোমবার সকালে এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কিছু অটোকে সীমানা থেকেই ঝাড়খণ্ডের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ব্যাক্তিগত গাড়ি নিয়ে যাঁরা প্রবেশ করতে চাইছেন তাঁদের প্রত্যেককেই আরটিপিসিআর নেগেটিভ রিপোর্ট দেখাতে হচ্ছে। তবে ব্যাঙ্ক, বিমা, কোলিয়ারি ও বিভিন্ন শিল্পসংস্থায় জড়িতদের বিশেষ পাশ দেখিয়ে যাতায়াত করতে দেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। পুলিশ কমিশনার অজয় ঠাকুর জানান, পণ্যবাহী ট্রাক যাতায়াতের ক্ষেত্রে সরকারের তরফে কোনও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি।