হাজিরা কম প্রাথমিক স্কুলে। বর্ধমান শহরে। ছবি: উদিত সিংহ।
বর্ধমান শহরের গোদা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাঠ সংলগ্ন স্কুলে বুধবার মেরেকেটে হাজির ছিল মাত্র ১২ জন পড়ুয়া। ওই মাঠেই বুধবার সভা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্কুল সূত্রে দাবি করা হয়েছে, অধিকাংশ পড়ুয়া মুখ্যমন্ত্রীকে দেখতে গিয়েছেন। শুধু ওই স্কুলই নয়, বর্ধমান শহর তথা সংলগ্ন ব্লকগুলির অনেক স্কুলেই পড়ুয়াদের হাজিরা এ দিন ছিল লক্ষ্ণনীয় ভাবে কম। ঠিক উল্টো ছবি দেখা যায় সভা স্থলে। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর মঞ্চের ঠিক সামনে ‘কন্যাশ্রী, ‘শিক্ষাশ্রী’ লেখা পোস্টার হাতে দেখা যায় বহু পড়ুয়াকে।
বর্ধমান শহরের স্কুলগুলিতে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, জেলা স্কুল শিক্ষা দফতরের তরফে তাদের বলা হয়েছিল, মুখ্যমন্ত্রীর সভায় পড়ুয়াদের নিয়ে যেতে হবে। প্রশাসনের একটি সূত্রে খবর, সভায় পড়ুয়াদের নিয়ে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন স্কুলকে রীতিমতো লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করে দেওয়া হয়। যদিও এই দাবির সরকারি স্বীকৃতি মেলেনি। পড়ুয়াদের সভাস্থলে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। শহরের ৩৩টি স্কুল থেকে ১২০০ ছাত্র এবং ১৩০০ ছাত্রী মিলিয়ে মোট আড়াই হাজার পড়ুয়াকে সভায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তাদের জন্য ৫০টি বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) শ্রীধর প্রামাণিক বলেন, ‘‘স্কুলগুলিতে পড়ুয়ার সংখ্যা কেন কম ছিল, তা জানি না। আবহাওয়া খারাপ থাকার কারণে হাজিরা কম হলেও হতে পারে।’’ মুখ্যমন্ত্রী সভায় পড়ুয়াদের নিয়ে যাওয়ার জন্য কি নির্দেশ জারি হয়েছিল? তাঁর জবাব, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নিজে হাতে অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে কন্যাশ্রী, সবুজসাথী-সহ একাধিক প্রকল্পের সহায়তা প্রদান করেছেন ছাত্রছাত্রীদের। সে কারণে প্রশাসনের তরফে অনেক পড়ুয়াদের সভায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’’ সভার কারণে অনেক স্কুলে নবম-দশম শ্রেণির পঠনপাঠন বন্ধ ছিল বলে প্রশাসন সূত্রে খবর।
মুখ্যমন্ত্রী সভামঞ্চের অদূরে গোদা প্রাইমারি স্কুলে এ দিন এক জন পড়ুয়াও আসেনি। প্রধান শিক্ষক ফাল্গুনী মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা চার জন শিক্ষকই স্কুলে উপস্থিত ছিলাম। কিন্তু কোনও পড়ুয়াই আসেনি। মুখ্যমন্ত্রী আসবেন। মনে হয় সে কারণেই ছাত্রছাত্রীরা আসেনি।’’ সভাস্থলের পার্শ্ববর্তী নবাবহাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬৮ জন পড়ুয়ার মধ্যে এ দিন হাজির হয়েছিল ১২ জন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মৈনাক মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পড়ুয়ার সংখ্যা অস্বাভাবিক কম থাকায় মিড ডে মিলের রান্নাও কম হয়েছে।’’ বেশির ভাগ স্কুলগুলির তরফে দাবি করা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর হেলিকপ্টার দেখবে বলে বহু ছাত্রছাত্রী স্কুলে আসেনি। আবার অনেক অভিভাবকের দাবি, রাস্তায় যে ভাবে বাস-গাড়ি যাতায়াত করেছে, তাতে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানোয় ঝুঁকিছিল। এক শিক্ষক বলেন, “রাস্তায় প্রচুর গাড়ি ছিল। রাস্তা পারাপারে বিপদের শঙ্কা থাকাতেই সম্ভবত স্কুলে পড়ুয়াদের সংখ্যা কম ছিল।” শহরের কয়েকটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলও বন্ধ ছিল। নোটিস দিয়ে সে সব স্কুলের তরফে জানানো হয়েছিল, ‘অনিবার্য কারণে’ স্কুল বন্ধ থাকবে। কয়েকটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল খোলা থাকলেও মুখ্যমন্ত্রীর সভা শুরুর আগেই ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়।