প্রতীকী ছবি।
সাতটি সরকারি গ্রন্থাগার রয়েছে মঙ্গলকোট ব্লকে। তার মধ্যে বন্ধ তিনটিই। আরও কয়েকটি নিয়ম মেনে খোলা হয় না, অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। বই না পেয়ে মুশকিলে পড়েছেন বইপ্রেমীরা। আবার পাঠাগারের বইয়ে ভরসা করতেন যে সব দুঃস্থ মেধাবীরা, মুশকিলে পড়েছেন তাঁরাও। এলাকার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষানুরাগীদের দাবি, একেই তরুণ প্রজন্মের টান কমছে বইয়ে। যাঁরা এখনও বইকেই সঙ্গী ভাবেন, এমন চললে বিকল্প খুঁজবেন তাঁরাও। তা ছাড়া, বই নষ্ট হওয়ার ভয় রয়েছেই।
জেলা গ্রন্থাগারিক সুমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, প্রায় দশ বছর ধরে গ্রন্থাগারিক পদে নিয়োগ বন্ধ। কর্মীর অভাবে বেশ কিছু গ্রন্থাগারের দায়িত্ব এক জনকে নিতে হচ্ছে। সব গ্রন্থাগার খোলা রাখাও সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘‘অনেক জায়গাতেই অবসরপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক বা পরিচালন কমিটির কর্মকর্তাদের দায়িত্ব নিয়ে গ্রন্থাগার খোলার অনুরোধ করা হয়েছে। তাতে কাজও হচ্ছে। অনেক পাঠকও এ ব্যাপারে আগ্রহী হচ্ছেন। তাঁদের দফতরের তরফে স্বাগত জানানো হয়েছে।’’
১৯৮১ সালে সরকারি অনুমোদন পায় কাশেমনগরের দিশারী গ্রামীণ পাঠাগার। স্থানীয় স্কুল শিক্ষক নলিনীমোহন দাসের দান করা জমিতে গড়ে ওঠে দোতলা ভবন। তখন থেকেই পাশাপাশি তিন-চারটি পঞ্চায়েত এলাকার হাজার খানেক মানুষ এখানকার সদস্য। পরবর্তীতে দুই কর্মীর মধ্যে এক জন বদলি, অন্য জন অবসর নেওয়ায় সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়ে যায় পাঠাগারটি। তার পরে পাঁচ বছর ধরে অনিয়মিত ভাবে খোলা হত সেটি। বছরখানেক ধরে পুরোপুরি ঝাঁপ বন্ধ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের আক্ষেপ, হাজার দশেক বই রয়েছে গ্রন্থাগারে। নিয়মিত ৩৫-৪০ জন পাঠক বই দেওয়া-নেওয়া করতেন। তার পরেও বন্ধ হয়ে গেল গ্রন্থাগারটি। ওই পাঠাগারের অবসরপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক অশ্রুজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘অনেক দুঃস্থ ছাত্রছাত্রী বইপত্র নিয়ে পড়াশোনা করতেন। এখন সবই বন্ধ। অমূল্য বইগুলি নষ্ট হয়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলকোটের কৈচরের শহিদ শিবশঙ্কর স্মৃতি পাঠাগার, মাজিগ্রাম সাধারণ পাঠাগারেরও একই অবস্থা। কর্মী না থাকায় বন্ধ সে দু’টিও। ওই পাঠাগারের সদস্য হারাধন মাজি, নিতাইচন্দ্র মণ্ডলদের অভিযোগ, ‘‘পাঠাগার বন্ধ থাকায় বাজার থেকে বই কিনে পড়তে হচ্ছে। অনেকের আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় তাঁরা বই পড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।” দ্রুত পাঠাগার খোলার ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। কৈচরের বাসিন্দা শ্যামল যশ, সুকান্ত ঘোষেরা জানান, আগে নিয়মিত পাঠাগারে যেতেন তাঁরা। এখন বাধ্য হয়ে অবসরে কেউ মোবাইলে অনলাইন ম্যাগাজিন পড়েন, কেউ ডিজিটাল লাইব্রেরির সদস্য হয়েছেন। মাজিগ্রামের চাকরির প্রস্তুতি নেওয়া যুবক তনয় অধিকারী, নিরুপম ঘোষদের আবার দাবি, ‘‘একে তো পাঠাগার বন্ধ। তার উপরে নিত্যনতুন সাধারণ জ্ঞানের বই বা চাকরির প্রস্তুতির বই মেলে না।’’
স্থানীয় বিধায়ক তথা গ্রন্থাগারমন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর দাবি, ‘‘যে সমস্ত পাঠাগার বন্ধ রয়েছে, তা আমার নজরে আছে। সেগুলি খোলার চেষ্টার পাশাপাশি, নতুনহাটের মিলন পাঠাগারের মতো গ্রন্থাগারকে উন্নীত করা হয়েছে। কর্মী নিয়োগও হচ্ছে। আশা করছি, তাড়াতাড়ি সমস্যা মিটে যাবে।’’