এ ভাবেই চলে অজয় পেরিয়ে পারাপার। রসুইয়ে অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।
রোজ সাইকেলে ঝকঝকে বাসন বেঁধে পাশের গ্রামে ফেরি করতে যান কাটোয়ার রাজুয়ার মানোয়ার শেখ। তবে পুরো রাস্তাটা সাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ হয় না তাঁর। কখনও সাইকেল কাঁধে তুলে, কখনও হাঁটিয়ে, কখনও নৌকায় তুলে পেরোতে হয় অজয়। কেন? রাজুয়া থেকে কেতুগ্রামের রসুই যাওয়ার পথে নদীর উপর সেতুই যে নেই।
রাজুয়ায় অজয়ের পশ্চিম দিকে রয়েছে কেতুগ্রামের রসুই, তেওড়া, বাকলসা, জামালপুরের মতো কুড়িটি গ্রাম। আর পূর্বদিকে রয়েছে কাটোয়ার রাজুয়া, কোশিগ্রাম, চুরপুনি, ন’নগর। তবে প্রায় চারশো ফুট চওড়া অজয় পারাপারের জন্য বর্ষায় বাসিন্দাদের ভরসা সেই নৌকা। আর শীতকালে নদীর জল শুকিয়ে বালি উঠে এলে ভরসা হাঁটা। তবে গ্রামবাসীদের দাবি, সবচেয়ে সমস্যা হয় শীতের আগে। নদে অল্প জল থাকায় নৌকা চলে না। বাঁশের অস্থায়ী সেতু গড়ে যাতায়াত করেন গ্রামবাসীরা। তবে দুশো ফুট বাঁশের সেতুতে পার করা গেলেও বাকি দুশো ফুট জলে-বালিতে হেঁটেই পেরোতে হয়।
রসুই, বিল্লেশ্বরে খেলনা, সাজগোজের জিনিস বেচেন সুকুর শেখ, বেচু শেখ, তাহের শেখরা। তাঁদের কথায়, ‘‘পনেরো বছর এভাবেই চলছে। কিন্তু ওদিকের গ্রামে বিক্রি ভাল বলে এভাবেই যাই।’’ সেতু না থাকায় বিল্লেশ্বরের বিকল্প বাঁধ রাস্তা ও চরখি সেতু লাগোয়া রাস্তাও ব্যবহার করেন অনেকে। দুধ ব্যবসায়ী সমীর মুখোপাধ্যায়, দুলাল ঘোষ, বাসুদেব ঘোষেরা বলেন, ‘‘আমরা আর ফেরিওয়ালাদেরই বেশি অসুবিধে। উপায় না থাকায় বড় দুধের ক্যান সমেত সাইকেল কাঁধে তুলেই চলতে হয়।’’ রসুই থেকে অজয় পেরিয়ে যান শ্যামবাজার বি এম হাইস্কুলের অশিক্ষক কর্মী সুশান্তকুমার ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘নভেম্বরে অর্ধেক সেতু থাকলেও বাকিটা জল পেরিয়েই মোটরবাইক চালাতে হয়।’’
চুরপুনি, কোশিগ্রামের বাসিন্দাদের আবার অভিযোগ, ফুলবাগান থেকে রসুইঘাট সংযোগকারী তিন কিলোমিটার রাস্তাও অতিরিক্ত বালির ট্রাক যাতায়াতে বেহাল। দুর্ঘটনাও ঘটে প্রায়শই। সেতু তৈরির সঙ্গে রাজুয়ার ওই সংযোগকারী রাস্তার সংস্কারেরও দাবি তুলেছেন তাঁরা।
কোশিগ্রামের প্রধান মতিহারা বেগম শেখ জানান, দিন পনেরো আগে এসে ভাঙা রাস্তাটি দেখে গিয়েছেন মহকুমাশাসক। সেতু তৈরির বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।