প্রস্তুত বৈঠকের মঞ্চ। আউশগ্রামের শিবদায়। ছবি: প্রদীপ মুখোপাধ্যায়
বাউল থেকে রায়বেঁশে, আদিবাসী নৃত্য, আর তার সঙ্গে ঢাকের বাদ্য— এ ভাবেই মুখ্যমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানানোর পরিকল্পনা করেছেন জেলা প্রশাসের কর্তারা। আজ, মঙ্গলবার বিকেল ৪টে নাগাদ আউশগ্রামের শিবদা মাঠে পূর্ব বর্ধমানের প্রশাসনিক বৈঠকে আসবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে নিয়ে তটস্থ জেলা প্রশাসন ও পুলিশের কর্তারা।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলার দুই গুরুত্বপূর্ণ আধিকারিক অসুস্থতা সত্ত্বেও শনি ও রবিবার দিনরাত কাজ করে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পাঠিয়েছেন জেলাশাসকের কাছে। আর এক কর্তা জ্বর গায়ে সভাস্থলে ছুটে বেড়িয়েছেন। জেলা সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, “১০০ দিনের কাজ-সহ অনেক প্রকল্প আমাদের ভাল চলছে। তার পরেও দিদি যদি কিছু জানতে চান, সে জন্য রাত জেগে প্রকল্পের বিশদ নথি দেখছি।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, অনেক প্রকল্পের কাজে স্বস্তি থাকলেও ‘কাঁটা’ হয়ে থাকছে স্বাস্থ্য দফতর। তার উপরে সম্প্রতি অন্নপূর্ণা নার্সিংহোম-কাণ্ড প্রশাসনের কর্তাদের বিড়ম্বনায় ফেলেছে। সে কারণে কোনও অভিযোগ না হলেও জেলা প্রশাসনের নির্দেশে স্বাস্থ্য দফতর তদন্ত শুরু করেছে। প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “গত বার প্রশাসনিক বৈঠকের সময়ে ছিল পিজি নার্সিংহোম, আর এ বার অন্নপূর্ণা নার্সিংহোম। দু’টি ক্ষেত্রেই কাঠগড়ায় সেই অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে দালাল-চক্র। তবে মুখ্যমন্ত্রী এ নিয়ে কড়া বার্তা দিলে প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরও দিশা পাবে।” গীতাঞ্জলি আবাস যোজনা বা বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পেও জেলার অবস্থান বিশেষ ভাল নয়। শাসকদলের অনেক বিধায়ক ৫০ শতাংশও কাজ করতে পারেননি বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বর্ধমান-সিউড়ি (২বি জাতীয় সড়ক) রোডের পাশে শিবদায় অস্থায়ী মঞ্চের সামনে ৬০০ জনের বসার ব্যবস্থা হচ্ছে। পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা ছাড়াও ৫ জন ব্যবসায়ী, ৪০ জন নার্সিংহোম মালিক ও ৫০ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া হাজির থাকবেন। হেলিপ্যাড থেকে সভার মঞ্চ পর্যন্ত ৩৫০ মিটার রাস্তার দু’ধারে রাঁয়বেশে, বাউল, ঢাক, ছৌ-সহ নানা লোকশিল্পের ১৪০ জন শিল্পী মুখ্যমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাবেন। এ দিন সভাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মাটি কাটার যন্ত্র দিয়ে কাজ চলছে। মঞ্চের ভিতর শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বসানো হচ্ছে। পুরো জায়গা সিসি ক্যামেরার নজরদারিতে থাকছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হেলিকপ্টার বা সড়কপথ— বোলপুর যাওয়ার জন্য দু’টি পথই খোলা থাকছে। ৪ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ২৪ জন ডিএসপি পদমর্যাদার পুলিশ অফিসারের নেতৃত্বে পাঁচশোরও বেশি পুলিশকর্মী মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছেন। সভাস্থল ঘিরে আধ কিলোমিটার রাস্তায় বাঁশের ব্যারিকেড দেওয়া হচ্ছে। তার উপরে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের ফ্লেক্স থাকছে। বীরভূম যাওয়ার রাস্তার দু’দিকে আবর্জনাও সাফ করা হচ্ছে।